বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতকে অস্থিতিশীল করতে তিনটি বিদেশী শক্তি তৎপরতা চালাচ্ছে। এই ৩ দেশের অর্থায়নে গার্মেন্ট খাতকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে ৫টি শ্রমিক সংগঠন। এর সঙ্গে আছে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সমপ্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন দিনের পর দিন কারখানায় বিক্ষোভ সৃষ্টির ভয় দেখিয়ে মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে আসছে। বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ভয়ে বেশ কিছু নতুন কারখানা এসব কথিত শ্রমিক নেতাকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা দিয়ে আসছে। এসব শ্রমিক সংগঠন বিভিন্ন গার্মেন্টে তাদের কর্মী ঢুকিয়েছে। টাকা না পেলেই তাদের দিয়ে কারখানা অশান্ত করে তোলা হচ্ছে। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, এসব শ্রমিক সংগঠন সম্পর্কে সরকারকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে পাওয়া তথ্য জানিয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তারা যা বলেছে তা টু হানড্রেড পার্সেন্ট সঠিক।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী গতকাল মানবজমিনকে বলেন, গার্মেন্ট শিল্প নিয়ে কি কি সমস্যা আছে তার সব কিছুই তো সরকার জানে। যদি দ্রুত এসব সমস্যা দূর করা না হয় তবে এ শিল্প সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। গতকাল বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম বলেন, গার্মেন্ট খাতকে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যেতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি বারবার কারখানা ভাঙচুর করা হয়, লুটপাট চালানো হয় তবে এ শিল্প ধ্বংস হতে বাধ্য।
বিদেশী শক্তি: গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট শিল্প সরিয়ে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে ৩টি বিদেশী শক্তি। দু’টি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এখানে ছদ্মবেশে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে বেশ কিছু গার্মেন্ট কারখানা ও বায়িং হাউজ গড়ে তুলেছে। রাজধানীতে এ ধরনের ১৮টি বায়িং হাউজ চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে তারা। গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে তারা এ শিল্পকে এদেশ থেকে সরিয়ে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যাবতীয় তথ্য তারা পাচার করছে।
শ্রমিক সংগঠন: সূত্র জানিয়েছে, বিদেশী শক্তিগুলো কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনকেও অর্থায়ন করছে। এসব শ্রমিক সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দফায় দফায় শিল্পে অস্থিরতা তৈরি করছে। বিজিএমইএ এরকম ৫টি শ্রমিক সংগঠনের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এর মধ্যে ওয়্যার অ্যান্ড ওয়্যার নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতায় জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এসব শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্ট খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনেও বাধা দিচ্ছে।
ব্যর্থ শিল্প পুলিশ: গার্মেন্ট শিল্পখাতে অস্থিরতা রোধে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে শিল্প পুলিশ গঠন করা হলে কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কারখানায় বিক্ষোভ সৃষ্টির আগেই তা প্রতিরোধ করতে পারছে না শিল্প পুলিশ। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও তেমন শক্তিশালী নয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অবশ্য ব্যর্থতা স্বীকার করতে রাজি নন শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালাম। তিনি বলছেন, শিল্প পুলিশ যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে। শিল্প পুলিশের তৎপরতার কারণে আগের চেয়ে বিক্ষোভের সময় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি: গার্মেন্ট শিল্প নিয়ে কাজ করা শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, মালিকরা অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অনেক শ্রমিক নেতাকে ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের হুমকির মুখে অনেক শ্রমিক নেতা নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো যাতে সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে আর কথা বলতে না পারে এজন্য তাদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম বলছেন, কিছু শ্রমিক সংগঠন বিদেশীদের টাকায় কাজ করছে এটা সত্য। তবে সবাই এটা করছে এটা ঠিক নয়। সরকারের উচিত যারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা।