ঢাকা : শিশুসহ দেশের প্রায় ৯৫ লাখ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিষণ্নতায় ভোগার হার দ্বিগুণ। বিষণ্নতাকে অবহেলা না করে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।
বুধবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ‘বিষণ্নতা: একটি বৈশ্বিক সংকট’—এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পড়ে শোনান মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান খান। তিনি বলেন, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪ দশমিক ৬ ভাগ এবং শিশু-কিশোরদের শতকরা ১ ভাগ বিষণ্নতায় ভুগছে। বিষণ্নতায় আক্রান্ত লোকজন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই কারণে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে বিষণ্নতার পরিসমাপ্তি ঘটে। অথচ বিষণ্নতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগের চিকিত্সা আছে। সঠিক সময়ে চিকিত্সা করলে রোগী ভালো হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, কমপক্ষে দুই সপ্তাহ কারও যদি বেশির ভাগ সময়ই হতাশা ও বিষণ্নতার অনুভূতি হয়, অনীহাসহ বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি বিষণ্নতা নামের মানসিক রোগে ভুগছেন। বিশ্বব্যাপী রোগের কারণে কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বিষণ্নতার স্থান তৃতীয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে এটি প্রথম স্থানে ছিল। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। নারীদের বিষণ্নতার ক্ষেত্রে পারিবারিক নির্যাতন, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন কারণ কাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে আলোচকেরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি চালু করার সুপারিশ করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে মানসিক রোগ নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার আছে। সঠিক তথ্য জানা না থাকা ও সচেতনতার অভাবে উপযুক্ত চিকিত্সা না নিয়ে মানুষ অপচিকিত্সার শিকার হচ্ছে। তাই সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
মনোরোগ চিকিত্সক মোহিত কামাল বলেন, শিশুসহ দেশের প্রায় ৯৫ লাখ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। তাই একে আর অবহেলা করার সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গোলাম রব্বানী, শাহ আলম, ফারুক আলম, এম এ হামিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন এবং সংবাদকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
1
Google