বার্তা৭১ ডটকমঃ বেঁচে থাকতে হলে খাবার আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। কিন্তু ইদানিং এই খাবারই যেন আজ আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাঙ্ক ফুডের প্রতুলতা দিনদিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একপ্রকার হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নিয়মিত জাঙ্ক ফুড গ্রহণের ফলে মানুষ স্থূলকায় হবার পাশাপাশি অসুস্থও হয়ে পড়ছে।
আর মানুষকে এভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে গড়ে উঠেছে বিখ্যাত ফাস্ট ফুড ইন্ডাস্ট্রি, যার বিগত বছরে লাভই ছিল প্রায় ৫৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকার হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এসব খাবার এবং তার প্রচারণা চলছে আপনার আশেপাশেই। এসবই আপনাকে এগুলোর প্রতি দুর্বল করে তুলছে।
শরীর সুস্থ রাখতে কি খাবো, কি খাবো না, কোনটা শরীরের জন্য ভালো না- এতকিছু ভেবেচিন্তে খাওয়াদাওয়া করা তো মুশকিল। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ বাইরের খাবারেই এমন সব পদ্ধতি আর ক্ষতিকর উপাদান থাকে যে শরীরের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, ক্যানসারের মতো জীবনঘাতী রোগেও হতে পারে।
আজ জেনে নেবো এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যা আমাদের অজান্তেই শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করছে:
পপকর্ন
টিভি দেখতে দেখতে, গল্পের ফাঁকে, পড়তে বসে বা সিনেমা হলে হাতে পপকর্ন থাকলে ভালো সময় কাটে। মাইক্রোওয়েভে এই পপকর্ন বানানো বেশ সোজা। প্যাকেট কেটে টাইম অনুযায়ী মাইক্রোওয়েভ অন করে দিলেই হল। তবে এই পপকর্ন দেখতে যতটা সুন্দর আর খেতে যতটা সুস্বাদু, শরীরের পক্ষে এটি ততটাই ক্ষতিকর। এতে ফুসফুসে ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে।
চিপস, স্নাকস
চিপস আর স্ন্যাকসের প্রতি আমাদের সবারই ব্যাপক আগ্রহ। এই খাবারগুলো যতটা মুখরোচক, ততটাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর প্রস্তুতপ্রণালীই অস্বাস্থ্যকর, যা আকর্ষণীয় মোড়কের আড়াল থাকায় আমরা কিছুই বুঝতে পারিনা। দীর্ঘদিন সতেজ রাখতে খাবারে আর মোড়কে দেওয়া হয় কেমিক্যাল জাতীয় উপাদান। এর কারণে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ক্যানসার।
ক্যানে রাখা খাবার
টিনের ক্যানে রাখা খাবার যারা নিয়মিত কিনে খান তাদের জন্য ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। টিনের পাত্রে বিসফেনল-এ বা বিপিএ থাকাতেই শরীর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
রিফাইন্ড সুগার
অনেকেই ভাবেন যে, ব্রাউন অথবা রিফাইন্ড সুগার কিউব বেশি স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। কারণ এতে সুন্দর রং ও গন্ধ আনার জন্য মেশানো হয় এক ধরনের গুড় যা শরীরের জন্য একদমই স্বাস্থ্যকর না। তাই রিফাইন্ড সুগার এড়িয়ে মধু অথবা বাজারে বিক্রি সাধারণ চিনি কম হলেও খান।
ডায়েট ফুড
যে খাবারের প্যাকেটে ডায়েট লেখা থাকে, সে খাবার দেখে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। সেগুলোকে স্বাস্থ্যকর ভাবারও কারণ নেই। সাধারণ খাবারের থেকেও অনেক সময় এই খাবার বেশি অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ হতে পারে।
কার্বোনেটেড কোমল পানীয়
আমরা দোকান থেকে ঠাণ্ডা কোমল পানীয় কিনে হরহামেশা পান করি। এটা আমাদের অভ্যাস। কিন্তু এটি বেশি না খাওয়াই ভালো। এতে বেশি পরিমাণ কর্ন সিরাপ ও কেমিক্যাল থাকায় নরম পানীয় শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। কার্বোনেটেড পানীয় থেকে দূরে থাকলে থাকবে ক্যানসারের ঝুঁকিও কম থাকবে।
কোল্ড ড্রিঙ্ক বা কোমল পানীয় পান করা পৃথিবীর বহু দেশেই একটা স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে গেছে। আমাদের দেশও এ ফাঁপা প্রবণতার বাইরে নয়। কোনো উৎসবে-অনুষ্ঠানে তাই তথাকথিত কোমল পানীয় থাকবে না – এটা যেন আমরা ভাবতেই পারি না। কিন্তু আমরা কি জানি, এসব পানীয় নামেই কোমল, কাজে আদৌ কোমল নয়, বরং বিধ্বংসী। এর ক্ষতির মাত্রা এতোই বেশি যে, একে কোমল বলা তো পরের কথা, পানীয়ই বলা যায় না।
জাঙ্ক ফুডসহ অন্যান্য কোমল পানীয় শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু মানুষের স্থূলতাসহ ক্যান্সারের মতো রোগ দানা বাধঁছে শরীরে, এ জন্য শুধুমাত্র এই খাবার দায়ী নয়। এর পেছনে রয়েছে আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাও।
বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশী। এবং প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ধূমপান, সূর্যের রশ্মি, রাসায়নিক পদার্থ, বাড়তি ওজন সহ আরও নানান কারণে কান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনো মানুষ।
আর এই জন্যই আপনার নিজের চিন্তা করে হলেও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে আগ্রহী হওয়া উচিত। এসব খাবার খেয়ে আপনি যতই ডায়েটিং বা ব্যায়াম করুন না কেন, ওজন কমাতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। আর ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগ তো আছেই।