বার্তা৭১ ডটকমঃ এই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে সুইডিশ একাডেমি। এই পুরস্কার প্রদান করা হবে আগামী বছর। অর্থাৎ, ২০১৯ সালে একই সঙ্গে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হবে দুই বিজয়ীকে। যৌন কেলেঙ্কারি, নোবেল বিজয়ীদের নাম ফাঁস, ইত্যাদি সংকটের সম্মুখীন হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাডেমি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংগঠন হচ্ছে সুইডিশ একাডেমি। সংগঠনটি সম্প্রতি তাদের এক সদস্য, কাটারিনা ফ্রস্টেনসনের স্বামী জিন-ক্লড আর্নল্টের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সামলাতে গিয়ে কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর কমিটি সদস্যরা ফ্রস্টেনসনের পদত্যাগের পক্ষে ভোট দেন। ফ্রস্টেনসনের পাশাপাশি পদত্যাগ করেন একাডেমির প্রধান, অধ্যাপক সাড়া ড্যানিয়াস ও আরো চার সদস্য।
এমতাবস্থায় একাডেমি জানিয়েছে, তারা চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করবে না। এই বছরের বিজয়ীকে সামনের বছরের বিজয়ীর সঙ্গে একসাথে পুরস্কৃত করা হবে। একাডেমি জানিয়েছে, জনগণের আস্থার অভাব থাকার কারণে কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। তখন থেকে বর্তমান অবধি এই পুরস্কারের জন্য সংকট সৃষ্টিকারী সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা এটি। একাডেমি সদস্যদের কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরে পুরস্কার প্রদান করা উচিত। তবে অন্যদের মতে, বর্তমানে সংগঠনটি এই পুরস্কার প্রদানের মতো অবস্থায় নেই। এর আগে বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে টানা ছয় বছর কোন পুরস্কার দেয়া হয়নি। এছাড়া ১৯৩৫ সালে কোন উপযুক্ত বিজয়ী পাওয়া যায়নি।
কেলেঙ্কারি
গত নভেম্বরে ফরাসি আলোকচিত্রকর জিন-ক্লড আর্নল্টের বিরুদ্ধে ১৮জন নারী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। প্রসঙ্গত, আর্নল্ট সুইডিশ একাডেমির অর্থায়নে একটি সাংস্কৃতিক প্রকল্প চালিয়ে ছিলেন। অভিযোগকারীদের ভাষ্যমতে, বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে একাডেমির মালিকানাধীন সম্পত্তিতে। আর্নল্ট অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পরবর্তীতে একাডেমি সদস্যরা আর্নল্ট এর স্ত্রী, কবি ও লেখিকা কাটারিনা ফ্রস্টেনসনকে তাদের কমিটি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত এর অভিযোগ ও নোবেল বিজয়ীদের নাম ফাঁস করে দেয়ার ঘটনা সংগঠনটিকে বিভক্ত করে দেয়।
ফলশ্রুতিতে একাডেমির প্রধান অধ্যাপক সারা ড্যানিয়াস, ফ্রস্টেনসনসহ বেশ কয়েকজন কমিটি সদস্য পদত্যাগ করেন। বর্তমানে কমিটির সদস্য সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ১১জন। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে কেরস্টিন একমান। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। কমিটি সংবিধি অনুসারে, নতুন সদস্য যোগ করার দেয়ার জন্য অন্তত ১২ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন।
মূলত, সুইডিশ একাডেমির কমিটি সদস্যরা আজীবন সদস্যপদ থাকার কারণে পদত্যাগ করতে পারেন না। তারা চাইলে কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন। কিন্তু একাডেমির রক্ষাকর্তা রাজা কার্ল ষোড়শ জানিয়েছেন, তিনি তাদের পদত্যাগ করার সুবিধার্থে নিয়মে পরিবর্তন আনবেন। এই পরিস্থিতিতে স্থগিত করা হয়েছে এই বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান। যার মানে হচ্ছে, ২০১৯ সালে এই খাতে দুইজন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হবে।