বার্তা৭১ ডটকমঃ এপ্রিলের শুরুতে ঢাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত ব্যক্তির পরিবারকে এ ধরণের ক্ষতিপূরণ দেবার ঘটনা এটি তৃতীয়। এর আগে বাংলাদেশে আরো দুটি বহুল আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে এরকম ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এই দুটি ঘটনায় এখনো পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণের অর্থ পৌঁছায়নি। এসব নিয়ে আইনি লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
ঝুলে থাকা বিচ্ছিন্ন হাত
গত ৩রা এপ্রিল বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই চালকের বেপরোয়া বাস চালানোর শিকার হয়ে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। এরপর আশংকাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ঢাকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় পাশাপাশি লেগে থাকা দুটি বাসের মধ্যে ঝুলে আছে বিচ্ছিন্ন একটি হাত।
বিচ্ছিন্ন হাতের সেই ছবি দেখে আঁতকে উঠেছেন বহু মানুষ। সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্য এবং বিতর্ক সৃষ্টি করে ঘটনাটি। এর পর ৪ঠা এপ্রিল একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ এপ্রিল রাজীব মারা যান।
মিঃ কাজল বিবিসি বাংলাকে বলেন, আদালত বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে আগামী এক মাসের মধ্যে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের অর্ধেক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। এই অর্থ নিহত রাজীবের খালা এবং তার গ্রাম বাউফলের সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলের নামে সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট করে রাখতে হবে। সেটি রাজীবের দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাইয়ের জন্য ব্যয় করা হবে।
মিঃ কাজল জানিয়েছেন, বাকী অর্ধেক অর্থ প্রদানের সময় নির্ধারণের জন্য ২৫ জুন আদালতে শুনানি হবে।
ক্ষতিপূরণ মেলেনি:
কিন্তু বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না হলে অথবা প্রচারমাধ্যমের আলোচিত না হলে সাধারণত আহত বা নিহত ব্যক্তি বা তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশাই থাকে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আদালতের এ ধরণের ক্ষতিপূরণ দেবার ঘটনাও খুব একটা ঘটে না বাংলাদেশে। ফলে আজকের এই রায় কি সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন উদাহরণ তৈরি করবে?
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবার ঘটনা এটি তৃতীয়। এর আগে ১৯৮৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন। ২০১৪ সালে আদালত নির্দেশনা দিয়েছিল তার পরিবারকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পরিশোধের। কিন্তু মিঃ চৌধুরী জানিয়েছেন, এখনো ঐ পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি।
এরপর ২০১১ সালে বিপরীতগামী যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে থাকা চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন। সেই মামলায় আদালত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সোয়া তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেবার আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু সে রায়ও কার্যকর হয়নি এখনো।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মিঃ চৌধুরী বলছেন, আজকের রায়টি অবশ্যই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সতর্ক হতে বার্তা দেবে। কিন্তু আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নিলে কোনো পরিবর্তনই আসবে না পরিস্থিতিতে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণ পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের কেউই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। -বিবিসি বাংলা