নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নখের যোগ্য নন দিলীপ বড়ুয়া’ খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যরিস্টার রফিক উল হকের এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ন একমত শিল্পমন্ত্রী। তবে এ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাজপথে যে ভূমিকা পালন করেছেন এর সঙ্গে ড. ইউনূসের তুলনা হবে না। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষের রক্ত শোষণ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, সে যোগ্যতা আমি অর্জন করতে পারি নি, ভবিষ্যতেও এমনটি অর্জন করার সম্ভাবনা নেই।
ব্যরিস্টার রফিক-উল-হক দেশের একজন শ্রদ্ধাভাজন আইনজ্ঞ। এরশাদ সরকারের আমলে তিনি অ্যার্টনি জেনারেল ছিলেন। পরবর্তীতে আমাদের দেশে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও অনেক সময় বিভিন্ন আসামীকে আইনি যুক্তিতর্ক দিয়ে খালাস করতেও উনি পারঙ্গমতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
এ ধরণের যোগ্য ও প্রবীণ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক গতকাল(শনিবার) রাজধানীর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সভায় ‘দিলীপ বড়ুয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তিনি ড. ইউনূসের নখের যোগ্যও নন‘ বলে যে মন্তব্য করেছেন, তার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষের রক্ত শোষণ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, সে যোগ্যতা আমি অর্জন করতে পারি নি, ভবিষ্যতেও এমনটি অর্জন করার সম্ভাবনা নেই। আমার রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে, জনগণের সেবা করা। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে কত লোক যে বাস্তুভিটা হারা হয়েছেন, কতলোক আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, তার খবর শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক না জানলেও, গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসি এ বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক মন্ত্রী হিসেবে আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নখের সাথে তুলনা করে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার তথা জনগণের সম্মানকে যে ভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন, সে বিষয়ে কোনো ধরণের মন্তব্য করা তাঁর পেশা ও ব্যক্তি মর্যাদার জন্য কোনো ভাবেই সম্মানজনক হবে না বলে আমি মনে করি। তবে এ বিষয়ে আমি সবিনয়ে দেশবাসীর কাছে বলতে চাই, আমি শুধু আমার একটি পরিচয়ের জন্য গর্ববোধ করি। আমি ১৯৬৯ সালের আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী আন্দোলনে ডিফেন্স রুলস্ অব পাকিস্তান এর আওতায় গ্রেফতার হয়েছিলাম। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষায় কথা বলার অপরাধে সে সময় আমার ওপর যে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তার কতটাই শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক জানেন। এমনকি তিনি অ্যার্টনি জেনারেল থাকাকালেও ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অপরাধে আমাকে গ্রেফতার করে যেভাবে নির্দয় নির্যাতন চালানো হয়েছিলো তা সম্ভবত ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক অবহিত নন। এছাড়া অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমি ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে যে ভূমিকা পালন করেছি, আশা করি, এর সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তুলনা হবে না।
এর পরও আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতা নিয়ে প্রবীণ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক যে কথা বলেছেন, এতে পেশাজীবী হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সম্মান বাড়লে, এক্ষেত্রে আমার কোনো দ্বিমত নেই। আশা করি, গণতন্ত্র ও মুক্ত চিন্তার অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে ভবিষ্যতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান বিবেচনা করে বক্তব্য দিলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মতামত প্রকাশের মূল্যবোধ লালনে সহায়তা করবে।