এমএলএম কোম্পানি ইউনিপেটুইউ’র শীর্ষ কর্মকর্তা ইমন, জামশেদ, মিঠু চৌধুরীসহ অন্যরা নিয়মিত ৫ তারকা হোটেল রিজেন্সি, ওয়েস্টিন ও রূপসী বাংলায় রাত কাটাতেন। একেক দিন একেক জন নারীসঙ্গী থাকতো তাদের সঙ্গে। বিদেশী ব্র্যান্ডের দামি মদ পান করতেন তারা। এছাড়া হোরোইন ও ইয়াবার নেশায়ও তারা আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রায় ৬ লাখ গ্রাহকের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসী জীবনে ডুবেছিলেন তারা। ইউনিপেটুইউ’র গ্রেপ্তারকৃত এমডি মুনতাসির হোসেন ইমন, জিএম জামসেদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইমন ও জামসেদ বর্তমানে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের হেফাজতে ৬ দিনের রিমান্ডে আছেন। আর দু’টি মামলায় ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে শুধু মোহাম্মদপুর থানায় এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পর্যায়ক্রমে তাদের রিমান্ডে আনা হবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম। পুলিশ বলছে, ইউনিপেটুইউ’র পলাতক উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরীর স্ত্রী’র সংখ্যা অন্তত ২০। ইমন ও জামসেদের একাধিক গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। এরা দু’জনে একাধিক বিয়ে করেছেন। এই ৩ জনের অর্ধশতাধিক রক্ষিতা রয়েছে। ইমন মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনে সেখানে রেখেছেন তার স্ত্রী ও সন্তানকে। সমপ্রতি তিনি এক মডেল কন্যাকে বিয়ে করেছেন। তবে ওই মডেল কন্যার বিরুদ্ধেও অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি এখন ফেরার। পুলিশ বলছে, ইমনের এই মডেল স্ত্রীর এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি নাম পাওয়া গেছে। সে কখনও তাবাসসুম, তানিশা, তাপসী, স্বপ্ন, সুপর্ণা, ঐশ্বর্য বা ঐশ্বরিয়া নামে নিজের পরিচয় দিয়েছে। কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য গুলশানের ১০১নং রোডের ১৪নং বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে থাই রিক্রিয়েশন ক্লাব নামের একটি অবৈধ বার ও নাইট ক্লাব। এছাড়া কাকরাইলের বেইলী রোডে জিন্স ক্লাব নামের একটি ক্লাব করা হয় ইউনিপে’র নামে। গুলশানের থাই রিক্রিয়েশন ক্লাবে প্রতিদিন সুন্দরী মডেল কন্যাদের আসর বসতো। থাকতো দামি মদ ও শিশা সেবনের জমজমাট আয়োজন। অবৈধ মদ বিক্রি ও মাদক সেবনের স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকেও মোটা অঙ্কে মাসোহারা দিতেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক ইন্সপেক্টরকে প্রতি মাসে দেয়া হতো ২০ লাখ টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দেয়ার কথা অকপটেই স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃত এমডি ইমন।
কষ্ট: টাকার অভাবে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম স্ত্রী’র চিকিৎসা করাতে পারেননি। বিনা চিকিৎসায় ৩ মাস রোগে ভোগে মারা যান তার স্ত্রী রুবিনা ইসলাম। অসুস্থ মা চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন মগবাজারের মুদি দোকানদার মনিরুল হকের। জমা দেয়া টাকা ফেরত না পাওয়ায় মাকিগঞ্জের মেয়ে জুলেখাকে তালাক দিয়েছেন তার স্বামী গোলাম মোর্তজা। খিলগাঁওয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর তিনি এখন থাকেন মিরপুরের শ্যাওড়া পাড়ায় একটি বস্তিতে। এরকম লাখ লাখ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসী জীবনে ডুবেছিলেন এমএলএম কোম্পানি ইউনিপেটুইউ’র কর্ণধাররা। গতকাল আনোয়ারুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানা চত্বরে বলেন, আমি ৩৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলাম। একটি টাকাও ফেরত পাইনি। আমি এখন নিঃস্ব। মগবাজারের মনিরুল হক বলেন, আমার দোকান বন্ধক রেখে নেয়া টাকা ইউনিপে’তে বিনিয়োগ করেছিলাম। টাকার অভাবে অসুস্থ মাকে বাঁচাতে পারিনি। তিনি ইউনিপে’র কর্মকর্তাদের ফাঁসি দাবি করেন। তিনি বলেন, টাকা ফেরত চাই না। ওদের ফাঁসি দেয়া হোক।
হরিলুট: ইউনিপেটুইউ’র উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরী একাই অন্তত ১৭শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া কোম্পানির এমডি মুনতাসির ইমন আত্মসাৎ করেন ২০০০ কোটি টাকা। জিএম জামসেদ নেন ৩০০ কোটি। শাহিন হাতিয়ে নেন ২০০ কোটি, পে-অর্ডারের মাধ্যমে নেয়া হয় ৩৪৯ কোটি, সাখাওয়াত সুমন নেন ৩০০ কোটি, মুকিত হাতিয়ে নেন ১০০ কোটি টাকা, তাহের নিয়ে যান ১০০ কোটি টাকা, অফিসের সব স্টাফ মিলে আত্মসাৎ করেন ৫০০ কোটি টাকা এবং ইউনিপেটুইউ’র ১০০ এজেন্ট আত্মসাৎ করে অন্তত ১০০০ কোটি টাকা।
সম্পদের পাহাড়: আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে নামে-বেনামে অর্থ সম্পদ গড়ে তোলেন ইউনিপের কর্মকর্তারা। বেশ কিছু সম্পদ কেনা হয় ইউনিপেটুইউ’র নামেও। গ্রেপ্তারকৃত এমডি ইমন ও জামসেদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজার কলাতলীতে কেনা হয়েছে ১৬১ বিঘা জমি। শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন ও কুয়াকাটায় কয়েক শ’ কোটি টাকার জমি কেনা হয়েছে। নরসিংদীতে কেনা হয়েছে ৪২ বিঘা জমি। ঢাকার আমিনবাজারে ২০ কাঠা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্লট, এলিফ্যান্ট রোডে ৪ শতক জমি, কুষ্টিয়া মজমপুর গেটের কাছে কয়েক বিঘা জমি কেনা হয়েছে মিঠু চৌধুরীর নামে। রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকায় ১০টি প্লট, ফরিদপুর ও খাবাসপুরে জমি কিনেছে ইউনিপে’র কর্মকর্তারা। এছাড়া আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে বাংলাবাজার পত্রিকা, রাজধানীর গুলশানে থাই রিক্রেয়েশন ক্লাব নামের অবৈধ বার ও নাইট ক্লাব এবং ধানমন্ডিতে কোম্পানির নামে বহুতল ভবন। এছাড়া কোম্পানির কর্মকর্তারা নিজেদের ব্যবহারের জন্য কিনেছেন একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি।
মিঠু চৌধুরী: প্রতারকদের গডফাদার মঞ্জুর এহসান চৌধুরী ওরফে মিঠু চৌধুরী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে, মিঠু চৌধুরী পলাতক। তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। কিন্তু ইউনিপে’র ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, মিঠু পলাতক নয়। পুলিশকে ম্যানেজ করে সে দেশেই অবস্থান করছে। পুলিশ তার অবস্থান জানলেও গ্রেপ্তার করছে না। মিঠু চৌধুরীর পিতার নাম ওয়ালিউল বারী চৌধুরী। স্থায়ী ঠিকানা মজমপুর রেলগেট, জেলা কুষ্টিয়া। তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকার বি ব্লকের ৭নং রোডের ২৮নং বাড়ি।
প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার: গ্রাহকরা টাকা ফেরত চাইতে গেলেই ইউনিপে’র কর্ণধাররা দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করতেন। বলতেন তাদের সঙ্গে কোম্পানির যোগাযোগ আছে। তাই হৈচৈ করে কোন লাভ হবে না। উল্টো জেলে যেতে হবে। ইউনিপেটুইউ’র ধানমন্ডি অফিস উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ ও তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। ইউনিপে’র কর্মকর্তা প্রতারক মিঠু চৌধুরী বলে বেড়ায়, ইউনিপে’র সঙ্গে আছে বর্তমান সরকার প্রধানের ছেলে ও বোন। তাই কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না। ইউনিপে মেম্বারস ক্লাবের সভাপতি সরওয়ার মোরশেদ বলেন, কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই সব সম্মানিত লোক জানতেনই না যে তাদের নাম বিক্রি করছে ইউনিপেটুইউ। পরে তারা আমাদেরকে বলেছেন, ইউনি পে’র সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
fasi howa ucit
আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে এরা হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে। অনেক কাঁদিয়েছে। তাই আমি চাই ওদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করা যা দেশবাসী যেন দেখে। এবং যা দেখে তাদের মনে শান্তি পায়।