বার্তা৭১ ডটকমঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার আমলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা বেড়েছে। তার প্রমাণ স্বরুপ তিনি উল্লেখ করেন হলি আর্টিজান ও নুসরাত হত্যা মামলার রায়। একই সাথে তিনি বলেন, হলি আর্টিজান মামলার রায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতাদের প্রতি অশনি সংকেত। জনগণের শান্তিময় ভবিষ্যতকে নিরাপদ করা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রতিফলন এই রায়।
বুধবার দুপুরে ঈদগাহ মাঠে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা উজ্জীবিত, যারা শেখ হাসিনার কর্মী, যারা পার্টির ঐক্য বিনষ্ট করবেন না তাদের নিয়ে দল করবেন। নিজের দল ভারি করার জন্য সুবিধাবাদি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে দলে টানবেন না। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের ঠাঁই আওয়ামী লীগে হবে না। মাদক, দুর্নীতিকে না বলুন।
তিনি বলেন, ঢাকায় যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তার প্রথম টার্গেট ঘরের লোক। এই শুদ্ধি অভিযান সারা দেশে শুরু হয়ে গেছে। নেত্রীর গোয়েন্দারা সারাদেশে কাজ শুরু করছেন। তারা আপনার আশেপাশেই আছে। নেত্রী ঘরকে শাস্তি দিয়ে পরকে বোঝাচ্ছেন।
যশোরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে যশোরে ৮০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। আরো ৫০০ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। যশোর-খুলনা মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ক্ষুব্ধ।এই উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে জানিয়ে দিচ্ছি কাজ ভালোভাবে দ্রুত শেষ না হলে খবর আছে।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি হলি আর্টিজান মামলার রায়ে ৭ জনের ফাঁসির আদেশ সুসংবাদ জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে আপন লোকদেরও নিস্তার নেই। আবরার হত্যাকারীরা সবাই ছাত্রলীগের হলেও কেউ রেহাই পায়নি। সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচারও তাদের হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা দীর্ঘদিন দলে পদ পায়নি, তাদের পদ দিতে হবে। নেতাদের পিছনে ঘুরে বেড়ায়। তারা পরিচয় দিতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করছে, আওয়ামী লীগে পদ নেই। মৌসুমী পাখিদের গুরুত্ব দেয়া যাবে না। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের সময় মৌসুমী পাখিদের পাওয়া যাবে না। নেতাদের আচরণ ভালো করতে হবে। কারণ একটি খারাপ আচরণে দশটি উন্নয়ন ঢেকে যাবে।আওয়ামী লীগ চায় বিশুদ্ধ রক্ত। দূষিত রক্তের দরকার নেই। আওয়ামী লীগে বিশুদ্ধ রক্তের অভাব নেই।
দলের ত্যাগী নেতাদের খোঁজখবর নেয়ার তাগিদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন, যারা দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ ছিল। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। কিছু নেতার কপাল খুলেছে। কিন্তু ত্যাগী নেতাদের অনেকেই এখনো কুড়েঘরে বসবাস করেন। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারেন না। অনেকে অসুস্থ আছেন। চিকিৎসা করাতে পারছে না। দলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার দরজা খোলা। প্রয়োজনে তিনি বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। আপনারা আমাদের জানাবেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন সভা সমাবেশের জন্য আর অনুমতি নিবেন না। রাজপথে মিছিলের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন। বিএনপির বক্তব্যে প্রমাণিত তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মানেন না। তারা সন্ত্রাসী দল। আমরা বলতে চাই খালেদা জিয়া রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে নয়। তিনি এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। এজন্য আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। আদালতের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্রাচার্য। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সদস্য এসএম কামাল হোসেন ও পারভীন জামান কল্পনা। আরো বক্তব্য রাখেন- বাগেরহাটের-২ আসনের (সদর-কচুয়া) এমপি শেখ তন্ময়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৫ আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-৬ আসনের এমপি ইসমাত আরা সাদেক, যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৪ আসনের এমপি রণজিত রায় ও যশোর-২ আসনের এমপি নাসির উদ্দিন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
বিকেলে সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক পদে ৬ জন করে প্রার্থী হন। পরে নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের নিয়ে সমঝোতায় বসেন। সমঝোতা শেষে ২২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। তিনি ঘোষণা দেন সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার পুনরায় মনোনীত হয়েছেন। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- সহসভাপতি আব্দুল মজিদ, হায়দার গণি খান পলাশ, খয়রাত হোসেন, আবদুল খালেক, মোহাম্মদ আলী রায়হান ও গোলাম মোস্তফা এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল আলম লিটন, মীর জহুরুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু ও প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ। সদস্য পদে এমপি ইসমাত আরা সাদেক, স্বপন ভট্টাচার্য, কাজী নাবিল আহমেদ, শেখ আফিল উদ্দিন ও রণজিত কুমার রায় এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল।