বার্তা৭১ ডটকমঃ করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউ মোকাবিলা করাটা ছিল স্প্রিন্টের মতো, দ্বিতীয়টি হবে ম্যারাথনের মতো।
ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের পুনরুত্থানের ব্যাপারে ধারণা দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান ডা. অলিভার জোনস-বোইয়া।
লকডাউন প্রত্যাহার করে নেয়ার সুবিধা নিয়ে ফ্রান্সের তরুণরা অবাধ সামাজিক চলাফেরা করায় প্যারিস, বোর্ডক্স ও ভূ-মধ্যসাগরীয় উপকূলীয় মার্সেলের মতো বড় বড় শহরগুলোর হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরাসি হাসপাতালগুলো এখন দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ মোকাবিলার সময় বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালের জরুরি সেবা বাদে অন্যান্য সব সেবা স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার সব সেবাই চালু রাখার চেষ্টা করছে হাসপাতালটি। দেশটিতে মহামারি মোকাবিলায় যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তাতে ভাইরাসটি সেখানে থেকে যাওয়ার জন্যই এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
ফ্রান্সজুড়েই হাসপাতালের কর্মীরা এখন প্রথম ধাপের চেয়ে বেশি করোনা রোগীর মুখোমুখি হচ্ছেন। করোনাভাইরাসের রোগীদের উপসর্গ কমিয়ে আনতে বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ স্টেরয়েড ওষুধ মজুত ও ভেন্টিলেটর সেবা উন্নত করছে। এ দুই ব্যবস্থা করোনা রোগীদের লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার হার কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
তবে অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান করোনা রোগীর সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. ক্যাথেরিন ফ্লরো। তিনি বলেন, শেষবারের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে। কারণ আমি মনে করি এবারের ঢেউ ধারাবাহিকভাবে আগের চেয়ে বেশি হবে এবং সময়ের সাথে সাথে সেটি শেষ হবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের বিস্তার দ্রুত ঘটতে থাকে। কিন্তু দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করায় বিস্তারের লাগাম টানতে সক্ষম হয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি।
বর্তমানে দেশটিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে একদিনে রেকর্ড ১০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হন। ভাইরাসটির ক্লাস্টারের সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দেশজুড়ে আইসিইউতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হারে।
গত সপ্তাহে দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বসন্তের চেয়ে আইসিইউতে করোনা রোগী ভর্তির এই হার ১০ গুণ কম হলেও যেভাবে বাড়ছে সেটি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়া লকডাউন দ্বিতীয়বার জারি না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফরাসী সরকার। যে কারণে ভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনার জন্য দেশজুড়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
বোর্ডক্স এবং মার্সেলে শহরে করোনাভাইরাসের বিধি-বিধান কঠোর করা হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক স্থানের পরিধি বৃদ্ধি, জনসমাগমের আকার সীমিত এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।
এ দুই শহরে বড় ধরনের অনুষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতির সংখ্যা ৫ হাজার থেকে কমিয়ে এক হাজারে আনা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছরে স্কুল বর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী।
এসব পদক্ষেপের সাফল্য চূড়ান্তভাবে ডা. জোনসের মতো চিকিৎসকদের কাছে আসা রোগীর সংখ্যা নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, মূলত করোনার ঢেউ নিম্নমুখী রাখাই হবে সবচেয়ে বড় সমস্যা। যদি সংক্রমণ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়, তাহলে আমরা ব্যাপকসংখ্যক কোভিড-১৯ রোগীর মুখোমুখি হবো। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে পারবো না।