শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির।
বৃহস্পতিবার বিকালে আচার্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে তিনি পদত্যাগপত্র দেওয়ার পরপরই নতুন উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বার্তা৭১ ডটকমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গভবনে অধ্যাপক শরীফ পদত্যাগপত্র দেওয়ার সময় তিনিও সেখানে ছিলেন।
অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আনোয়ার হোসেনকে নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি। কর্নেল আবু তাহেরের এই ভাই সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
নতুন নিয়োগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অধ্যাপক আনোয়ার বার্তা৭১ডটকমকে বলেন, “আমি খবরটি শুনেছি, তবে অফিসিয়ালি কিছু পাইনি। তা পাওয়ার আগে কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
এই বছরের শুরু থেকে আন্দোলনের কারণে চাপের মধ্যে থাকা শরীফ এনামুল কবির বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গভবনে যান। পদত্যাগপত্র দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পরই বেরিয়ে আসেন তিনি।
নিয়োগে অনিয়ম এবং এক ছাত্রলীগকর্মী নিহত হওয়ার জন্য শরীফ এনামুল কবিরকে দায়ী করে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা পক্ষকাল আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তার আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এবং এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অচল এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে গত ৩ মে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপাচার্যকেও ডেকে পাঠান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর অধ্যাপক কবির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বা চ্যান্সেলর যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই মেনে নেবেন তিনি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাভারে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান শরীফ এনামুল কবির।
উপাচার্য হিসেবে প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ছাত্রলীগের ‘একটি অঞ্চলভিত্তিক’ অংশকে মদদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধার অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক কবিরের বিরুদ্ধে।
এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্যিকীকরণ, ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা নিয়েও সমালোচনায় পড়েন তিনি।
তবে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে এই বছরের শুরুতে, তার মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ নেতাদের হামলায় সংগঠনটির অন্য অংশের কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ নিহত হলে।
গত ৯ জানুয়ারি জুবায়ের খুন হওয়ার পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম।
ওই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা এবং প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন চালাতে থাকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক জোট নেতাদের ওপর ‘উপাচার্যপন্থী ছাত্রলীগ’ হামলা চালালে শিক্ষার্থীরাও শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামে।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনশনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী ।