বার্তা৭১ ডটকমঃ চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বছরের সর্বোচ্চ ২১৯ জন এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে জানুয়ারিতে ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু সংক্রমণের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি অনুসারে সেপ্টেম্বরের পর এতে আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কথা থাকলেও উল্টো বাড়ছে। অক্টোবরেও থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে।
মাসওয়ারি সংক্রমণের হিসাবে, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চ ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ও অক্টোবরে ১৬৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিকে দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে ২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ১৯ জন ও ঢাকার বাইরে হাসপাতালের দুজন রয়েছেন। ২১ জনের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে তিনজন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে দুজন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে খুলনা বিভাগে দুজন রোগী ভর্তি হন। এ নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ জনে। মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে রাজধানীতে ৮২ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে তিনজন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত মোট ৮৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৫৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। তার মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দুজনের মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করে একজন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হন।
গত ১১ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার পরিচালক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি জানিয়েছিলেন, রোগব্যাধির স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি অনুসারে সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে এডিসমশাবাহিত ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধির কথা ছিল না। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে অক্টোবর ও নভেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে আমরা লক্ষ্য করছি, করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি সারাদেশে বিশেষ করে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম মূলত সিটি করপোরেশনের। মশক নিধনে তারা চিরুনি অভিযানসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করছে। রাজধানীর হাসপাতালের পরিচালক, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাাশাপাশি পারিবারিক পর্যায়ে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। ডেঙ্গু মশার বিভিন্ন উৎপত্তিস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও স্বচ্ছ পানি যেন না জমে সেদিকে নিজ উদ্যোগে খেয়াল রাখতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে তিনি বিকেলের দিকে ফুলস্লিপ জামা পরিধান ও শিশুদের শরীর ঢেকে দেয়ার পরামর্শ দেন।