আব্দুল্লাহ আল শাফী, বার্তা৭১ ডটকমঃ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর এ সময়ে দুর্নীতি-অনিয়ম করে আয় করা টাকা জীবন বাঁচাতে কাজে আসেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন: একটা সময় দেখে যেতো একটু থেকে একটু হলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেতো। কিন্তু করোনা বুঝিয়ে দিয়ে গেলো টাকা-পয়সার কোন মূল্য নেই। আর মনে হয় করোনাভাইরাস এসেছে মানুষকে ‘শিক্ষা’ দিতে।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্স যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এবার দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে দলীয় সভাপতির দ্বিতীয় যোগদান।
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাপ্তির জন্য রাজনীতি না করে জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন: করোনা দেখিয়ে দিলো টাকা পয়সা কোন কিছুর মূল্য নেই। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেখানে করোনা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম একদিনের জন্যও থামতে দেয়নি। অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাইনাস গ্রেডে সেখানে আমরা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হয়তো ধরে রাখতে পরিনি। কিন্তু পাঁচের ওপরে আমাদের প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
এসময় করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
করোনায় অর্থনীতির গতি ধরে ধরে রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন: করোনাভাইরাস এসে সারা দুনিয়া স্থবির করে দিয়েছে, আমাদের দল আমাদের সরকার কিন্তু থেমে থাকেনি। জনগণের জন্য কাজ করে চলছি৷ অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচলে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে প্রণোদনা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন: আমার করোনা মহামরীতে মৃত্যুর হার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। কারণ ঘাবড়ে না গিয়ে তৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। করোনা সংক্রমণ শুরুর পরই দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগ করেছি, নার্স নিয়োগ দিয়েছি।
এসময় করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সকলকে সতর্ক হবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন: করোনার আবার একটা ধাক্কা আসছে। সচেতন হলে কিন্তু সুস্থ থাকা যায়৷ মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে; এখন এর বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন আসছে তা নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। আমরা আগাম টাকা দিয়ে রাখছি৷ যখনই বাজারে আসবে আমারাও পাবো। এখন মাস্ক পরা-স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
সরকারের নানামূখী সমালোচনার জবাবে সরকার প্রধান বলেন: আমার জানতে ইচ্ছে হয়, যারা নলেন দেশে গণতন্ত্র নেই; তাদের কাছে আমার প্রশ্ন-জিয়া যখন হত্যা-ক্যু করে ক্ষমতা দখল করে ছিলো, ৯৬ সালে দ্বিতীয়বার তখন খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এলো; ২০০১ এ বিএনপি-জামায়াত জোট মেয়েদের ওপর যখন অমানবিক নির্যাতন করলো তখন কী গণতন্ত্র ছিলো?
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন: এখন তারা কী করে- ভোটে প্রার্থী দেয় পরে ভোটের মাঝামাঝি সরে দাঁড়ায়। এটা তাদের প্লান বি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। তারা নির্বাচনের দিনে বাসে আগুণ দিয়ে আবার সাংসদে দাঁড়িয়ে সরকারের সমালোচনা করে! বিএনপির মিথ্যাচার থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানা প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন: ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেনি। তার নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে। হত্যা-খুন-ক্যু এসব করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন কাজ করেছে।
আওয়ামী লীগ আগামীর চিন্তা করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন: আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন যাদের একটি লক্ষ্য আছে, দেশ নিয়ে পরিকল্পনা আছে। আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণে এবং দেশের উন্নয়নে রাজনীতি করা। কিছু পাওয়া নয় মানুষের জন্য কিছু করতে পারাই আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে।