ও লেভেল এবং এ লেভেল পরীক্ষার সময় হরতাল চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে বৃটিশ কাউন্সিল তাদের কেন্দ্র প্রত্যাহার করে নিতে পারে। যারা হরতাল আহ্বান করেন তাদের কাছে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এমন একটি মনোভাব ব্যক্ত করেছে বলে জানা গেছে। প্রতি বছর জানুয়ারি ও মে মাসে দুই পর্বে বৃটিশ কাউন্সিলের নেয়া পরীক্ষায় বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে থাকে। গত ১৭ই মে বিরোধী দলের ডাকা হরতালের প্রেক্ষাপটে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে বৃটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী হরতাল নীতি অনুসরণ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী দল এবং অন্য যারাই হরতাল ডাকে তাদের তেমন কোন স্থায়ী ও জনবান্ধব হরতাল নীতি নেই। বৃটিশ সিদ্ধান্তের পর সংশ্লিষ্টরা কি মনোভাব দেখিয়েছে তা জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশ থেকে কেন্দ্র প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটলে তা বাংলাদেশের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেই শুধু ভয়ানক প্রতিক্রিয়া পড়বে না একই সঙ্গে তা বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
গত ১৮ই মে রাত ১২টার প্রথম প্রহরে দু’টো পর্যন্ত পরীক্ষা হলো। এমন নয় যে, এই সিদ্ধান্ত বিএনপি’র হরতাল ডাকার পরে নেয়া হয়েছে। ওইদিন রাত ১২টায় পরীক্ষা হবে সেটা পূর্ব নির্ধারিত ফর্মুলার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু এই নীতির সীমাবদ্ধতা হলো একই দিনে তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া। ঢাকার একটি স্কুলের ও লেভেল পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, তাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে। কারণ রাত দু’টোয় অঙ্ক (ফারদার পিওর ম্যাথ) পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে মানসিক কিংবা শারীরিকভাবে ন্যূনতম বিশ্রাম নেয়াও সম্ভব হয়নি। বইপত্রের পাতা ওল্টানোর প্রশ্ন নেই। নাশতা করারও ফুরসত ছিল না। কারণ যানজটে জেরবার শহরের অপর প্রান্তে অবস্থিত বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার পরীক্ষা কেন্দ্র। সেখানে তাকে ১৮ই মে সকাল সাড়ে এগারোটায় বায়োলজি পরীক্ষায় বসতে হবে। তাই তাকে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা আগে রওনা দিতে হবেই। নিয়ম হলো নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে নির্ধারিত জায়গায় আসন নিতে হবে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে একটি লেকচার দেয়া হয় পরীক্ষা প্রদানের নিয়ম-নীতি বিষয়ে।
ওই শিক্ষার্থী জানায়, সে দু’টি বিষয় অতিরিক্ত নিয়েছিল যার একটি অর্থনীতি। সেটি ওই দিন বিকাল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে তার এক ঘণ্টা দীর্ঘ বায়োলজি পরীক্ষা সাড়ে ১২টায় শেষ হলেও তার পক্ষে বাসায় ফেরা সম্ভব হয়নি। কারণ সাড়ে চারটার ৪৫ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশের অনুশাসন তার সামনে ঝুলছিল।
এভাবে ১৮ই মে তাকে ১৯ ঘণ্টায় তিনটি ভিন্নধর্মী ‘পিওর ম্যাথ, বায়োলজি ও ইকোনমিক্স’ পরীক্ষা দিতে হয়।
হরতাল নীতি সম্পর্কে বৃটিশ কাউন্সিলের নীতি ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়। এতে বলা আছে, যদিও আমরা আশা করি, কোন বিঘ্ন ঘটবে না। ভালয় ভালয় পরীক্ষা হবে। দুপুর ১২টায় হরতাল শেষ হলে সাড়ে ১১টার পরীক্ষা হবে দুপুর দেড়টায়। বিকাল সাড়ে চারটার পরীক্ষা যাবে সন্ধ্যা ছয়টায়। দুপুর দু’টোয় হরতাল শেষ হলে সাড়ে ১১টার পরীক্ষা হবে বিকাল সাড়ে তিনটায়, বিকালের পরীক্ষা হবে রাত আটটায়। হরতাল যদি সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয় তাহলে সকালের পরীক্ষা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়, বিকালের পরীক্ষা হবে রাত ১২টায়। সে কারণেই ১৭ই মে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল থাকার কারণে ওইদিনের বিকালে অনুষ্ঠেয় পিওর ম্যাথ হলো রাত ১২টায়।
তবে যদি লাগাতার হরতাল চলে মানে হরতালের মধ্যে মধ্যরাতও পড়ে, তাহলে তার ওষুধও বৃটিশ হরতাল নীতিতে দেয়া আছে। সেক্ষেত্রে বৃটিশ কাউন্সিল ওইদিনের পরীক্ষা বাতিল করার অধিকার রাখে। অবশ্য সেক্ষেত্রে এক পেপারের পরীক্ষা ফি (সাড়ে ছয় হাজার টাকা) ফেরত দেয়া হবে না। হরতালের পরে পরীক্ষার হলে যেতে কোন ঝুঁকির দায়দায়িত্ব বৃটিশ কাউন্সিল বহন করবে না।