ঢাকা, ২০ মে: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আলোচনায় যাবে। তবে এর আগে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের ঘোষণা দিতে হবে সরকারকে। নয়তো কঠোর আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনে গণঅনশন কর্মসূচিতে একথা বলেন তিনি।
প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। তুলে ধরেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নানা ব্যর্থতার চিত্র।
বেগম জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আমরা আলোচনায় যেতে প্রস্তুত। তার আগে পরিষ্কারভাবে জনগণকে জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের ঘোষণা দিতে হবে। আর সেটি যদি না হয়, তাহলে আন্দোলন মোকাবেলার জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকুন।”
সভা-সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকার বাধা দিলে হরতালের মতো কঠিন কর্মসূচি দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি।
“সুনির্দিষ্ট কোনো অ্যাজেন্ডা ছাড়া মুখের কথায় আলোচনায় যাবেন না তিনি” –বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন বিরোধীদলীয় নেতা।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সব মন্ত্রী লুটপাটে ব্যস্ত। আগামী দিনে দুর্নীতির টাকাগুলো দিয়েই আবার নির্বাচন করবেন তারা।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সব আত্নীয়-স্বজন দুর্নীতিবাজ বলেও মন্তব্য করেন বেগম জিয়া। তিনি বলেন, “এসবের বিচার দেশে না হলেও আন্তর্জাতিকভাবেও হবে একদিন।”
পর পর দুইবার দুর্নীতির প্রতিবেদন পেয়েও তা প্রধানমন্ত্রীর ভয়ে অর্থমন্ত্রী প্রকাশ করছেন না বলেও জানান তিনি।
পদ্মাসেতু নির্মাণ না হওয়ার কারণ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার কারণেই বিশ্বব্যাংক এই সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করছে না। সেতুটির নির্মাণকাজ শুরুর আগেই বড় ধরণের দুর্নীতি হয়ে গেছে। তাই এই সরকার আর পদ্মা সেতু করতেও পারবে না।”
জনগণ বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে আছে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, “সরকারের হুমকি-ধামকিতে কাজ হবে না। সরকার ব্যর্থ হয়ে আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছে। তাদের মাথায় গণ্ডগোল।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতির কিছুই বাস্তবায়ন করেনি। বিগত তিন বছরে নিজেদের জন্য তারা যা যা বানানোর দরকার ছিল তা তারা বানিয়ে ফেলেছে এবং সেসব সম্পদ বিদেশে নিয়ে রাখছে।”
প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয়ভাবে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এজন্য নিয়োগপ্রাপ্তরা কোনো কাজ করতে পারে না। পুরো প্রশাসন আজ অচল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দলীয়করণ ছাড়া কিছু বুঝে না।”
চিরকাল ক্ষমতায় থাকার যে স্বপ্ন সরকার লালন করছে সেটি বাস্তবায়ন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যর্থতার দায় নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে অথবা তার আগেই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।”
বিচারবিভাগ স্বাধীন নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বেগম জিয়া বলেন, “বিচারবিভাগ মানুষের আস্থা হারিয়েছে। বিচারকরা চেহারা দেখে রায় দেন। আওয়ামী লীগ হলে খুনের আসামিও মাফ পায়।”
বিচার বিভাগের প্রতি হস্তক্ষেপ না করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ সবক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতায় দেশের অবস্থা করুণ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “জনগণের বেলায় এই সরকার শুধু নাই, নাই, নাই। আর নিজেদের বেলায় শুধু খাই, খাই, খাই। এটি বন্ধ করতে হবে।”
সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ ঠেকাতেই সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে পরিকল্পিতভাবে সরকারের লোকজন হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
তিনি আবারো অভিযোগ করে বলেন, “গোয়েন্দাবাহিনী, র্যাব ও সরকারদলীয় লোকজন মিলে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে।”
যেভাবে যেখান থেকে তাকে নেয়া হয়েছে সেভাবে ফেরত দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।