ঢাকা, ২১ মে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিএনপি-জামায়তপন্থী শিক্ষকদের সাদা প্যানেল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সিন্ডিকেটের পাঁচটি পদের পাঁচটিতেই সাদাদল জয় পেয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী পন্থী মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষক প্যানেল নীল ও গোলাপী দলের ভরাডুবি হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিন্ডিকেটসহ অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে নীল দল সিন্ডিকেট পদে কোনো পদ না পেলেও একাডেমিক পরিষদের ছয়টি পদের পাঁচটিতে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে দুইটি ডিনের একটিতে বিএনপি-জামায়াত পন্থী সাদাদলের প্রার্থী এবং অন্যটিতে নীল দলের প্রার্থী জয় পেয়েছে।
ফাইন্যান্স কমিটিতে বিএনপি পন্থী সাদাদল জয়লাভ করেছে।
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ছয় ধরনের পদের মধ্যে পাঁচটিতে নির্বাচন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ডিন, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও প্রাধ্যক্ষদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ছয়জন শিক্ষক সিন্ডিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু দুজন ডিন অনির্বাচিত অবস্থায় থাকায় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে এ বিভাগে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন।
সিন্ডিকেটে জয়ী সাদাদলের পদপ্রার্থী: প্রাধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান পেয়েছেন ৬১১ ভোট, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রসায়ন বিভাগের ড. তাজমেরী সেলিমা আখতার ইসলাম ৬১০ ভোট, সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. হাসানুজ্জামান (স্বপন) ৬১৩ ভোট, সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম (মঈন) ৬৬৩ ভোট , প্রভাষক ক্যাটাগরিতে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের মো. মাজহারুল আনোয়ার ৫৮৩ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
পরাজিত নীলদল
সিন্ডিকেট পদপ্রার্থী: সিন্ডিকেটের প্রাধ্যক্ষ ক্যটাগরিতে কবি জসীম উদদীন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. আখতারুজ্জামান ৫৭০, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সহিদ আকতার হোসেন ৫৬৫, সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রসায়ন বিভাগের মো. আফতাব আলী শেখ ৫৫৫, সহকারী অধ্যাপক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের মো. আকরাম হোসেন ৫০০, প্রভাষক ক্যটাগরিতে ব্যবসায়ে প্রশাসন ইনস্টিটিউটের রেজওয়ানুল হক খান ৫৭১ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
সাদাদল একাডেমিক পরিষদের প্রার্থী: সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মো. আব্দুল করিম ৫৫৯, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আসলাম হোসেন ৫৪০, ফলিত রসায়ন ও কেমি-কৌশল বিভাগগের ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ৫৪০, সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ৫৬৩, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মো. আবদুস সালাম ৫৭৯ এবং প্রভাষক ক্যাটাগরিতে দর্শন বিভাগের মোহাম্মদ দাউদ খাঁন ৫৫৬ ভোট পেয়েছেন।
নীলদলের একাডেমিক পরিষদের প্রার্থী: একাডেমিক পরিষদের সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে- গনিত বিভাগের ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার ৫৭৫, ইংরেজি বিভাগের ড. তাজিন আজিজ চৌধুরী ৬৩৩, আইন বিভাগের শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন) ৫৮৪ ভোট পেয়েছেন।
সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের মুহাম্মদ মাঈনুল করিম ৫৮৭, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ৫০৯ , গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সুরাইয়া বেগম ৫৭৬।
ফাইন্যান্স কমিটি: বিএনপি-জামায়াত পন্থী সাদাদলের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম ৬০৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে নীলদলের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দীন ৫৭০ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
ডিনপদে : এছাড়া ফার্মেসি অনুষদের ডীন নির্বাচনে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবম ফারুক ২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এবং সাদাদলের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত ২১ ভোট পেয়ে হেরেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ডিনপদে সাদাদলের ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক ৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এবং ৩২ ভোট পেয়ে নীলদলের ড. মো. সেকুল ইসলাম পরাজিত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদাদলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন বার্তা৭১ ডটকমকে বলেন, ‘‘এই নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক দলীয় নিয়োগ দিয়েছে। তারপর ১৪টি পদের আটটিতে বিশেষ করে সিন্ডিকেটের পাঁচটিতে পাঁচই সাদাদল পেয়েছে। এই ফলাফলই প্রমাণ করে শিক্ষকরা সাদাদলের পক্ষেই আছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমরা বেশ ভাল করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় সিন্ডিকেট নির্বাচনেও সাদাদল জয়ী হয়েছে।’’
নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
এ নির্বাচন সর্ম্পকে নির্বাচক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বার্তা৭১ ডটকমকে বলেন, ‘‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মাত্র ৪৬টি ভোট নষ্ট হয়েছে। এতে সাদাদল আটটিতে এবং নীলদল ছয়টিতে জয় পেয়েছে।’’