ঢাকা, ২২ মে: হরতালের একটি মামলায় বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকনকে চার দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিটে শুনানি শেষে মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে খোকনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন তিনি।
সিনিয়র নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত ১৭ মে হরতাল চলাকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে খোকনকে আটক করে পুলিশ। এরপর পল্টন থানার পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন উপ পরিদর্শক মোক্তার হোসেন।
প্রাথমিক শুনানি শেষে মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরী ওইদিন আরো শুনানির জন্য ২২ মে দিন রাখেন এবং খোকনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুনানির জন্য খোকনকে মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
খোকনের জামিন শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, বোরহান উদ্দিন, খোরশেদ আলম, মো. ইকবাল হোসেন, গোলাম মোস্তফা খানসহ শতাধিক আইনজীবী।
তারা শুনানিকালে বলেন, “এ মামলায় এজাহারভুক্ত ২০ জন আসামি সবাই জামিনে আছেন। এ ছাড়া তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারাও জামিনে আছেন। ঘটনার দিন তিনি নরসিংদীতে ছিলেন। যেহেতু তিনি ঢাকায় ছিলেন না তাই এজাহারভুক্ত আসামি হননি। এ জন্য তিনি জামিন পেতে পারেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্র পক্ষে মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু, খোন্দকার আব্দুল মান্নানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু আইনজীবী খোকনের জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য দেন এবং বলেন, ঘটনার দিন খোকন গাড়ি ভাঙচুর এবং ককটেল ফাটানোর ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই তাকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে হাকিম জামিন আবেদন খারিজ করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হকও এ মামলার আসামি। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল টানা হরতালের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের কাজে বাধা দান, গাড়ি ভাঙচুর, চার-পাঁচ হাজার লোক নিয়ে মিছিলের চেষ্টা ও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা এবং বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে এ মামলা করে পল্টন থানা পুলিশ। ওই মামলায় পল্টন থানা পুলিশ খায়রুল কবির খোকনকে আটক করে শোন এরেস্ট দেখায়।
খোকনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডে দেয়ায় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিলসহ সরকারবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় পুলিশ আদালতে ঢোকার গেট বন্ধ করে সাধারণ মানুষের যাওয়া-আসা বন্ধ করে দেয়।
ইতিপূর্বে জাতীয় নেতাদের বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ১৮ দলীয় নেতাদের আটক ও ব্যারিস্টার খোকনকে জেল হাজতে প্রেরণ এবং আদালতকে দলীয়করণের প্রতিবাদে সকাল থেকেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীরা মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত আদালত বর্জন কর্মসুচি পালন করে আসছিল।
বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা সকাল থেকেই আদালতে থেমে থেমে মিছিল ও সমাবেশ পালন করছে। সমাবেশে আইন প্রতিমন্ত্র্রী কামরুল ইসলাম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পদত্যাগ দাবি করা হয়। বুধবারও ঢাকা জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করবেন বলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
অপরদিকে আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীরা আদালত বর্জনের বিরুদ্ধে মিছিল এবং শ্লোগান দেন। এ নিয়ে আদালতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী এবং অওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হাতহাতিও হয়। তবে কেউ আহত হয়নি। এ সময় সি এম এম আদালতের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল।