সরকারি জমি অনিয়মের মাধ্যমে বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তিদের চোর আখ্যায়িত করেছে আদালত।
বিচারকের এই বক্তব্যের সময় আদালতে ছিলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারদলীয় জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও জিয়াউল হক জিয়া; যাদের পাওয়া প্লট নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তলব করা হয়েছিল।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি এলাকায় প্লট বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে একটি রিট আবেদনের শুনানিতে তিন জনই মঙ্গলবার হাই কোর্টে হাজির ছিলেন।
ওই এলাকায় প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ।
এলজিআরডি সচিব আবু আলম শহিদ খান, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আশীষ রঞ্জন দাস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পুলিশ) নাজিম উদ্দিন, বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদকে কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে।
ওই এলাকায় বরাদ্দ করা প্লটের চুক্তি আইনসঙ্গত হয়েছে কি না, কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে কি না, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে কমিটিকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে।
হাতিরঝিল এলাকায় প্লট বরাদ্দে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে উভয় কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
ওই এলাকায় প্লট বরাদ্দে ‘অনিয়ম’র তথ্য তুলে ধরে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে হাই কোর্টের ওই বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে গত ৯ মে প্লট বরাদ্দ পাওয়া কামরুল ও জিয়াকে তলব করে।
সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী গত ১৬ মে আদালতে হাজির হন। সেদিন শুনানিতে শফিক রেহমানকেও তলবের আদেশ দেয় আদালত। সে আদেশে মঙ্গলবার তিনজনই আদালতে হাজির হন।
শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক বলেন, “এসব জমি যারা দখল করেছে; চোর, সবাই চোর। যারা জনগণের এসব জমি ধারণ করছে, যারা এসব জমি বিলিয়ে দিয়েছে সবাই চোর।
“জমি বরাদ্দের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে রাজউক যেটা করে (বিজ্ঞাপন দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করে)। এক্ষেত্রেও আপনাকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সেটা পত্রিকায়ই দেন আর টিভিতেই দেন। এটা (বিজ্ঞাপন) ছাড়া যারা জমি নেবে, সবাই চোর। কারণ এটা তো জনগণের সম্পত্তি, তাদের না জানিয়ে এটা দেওয়া যায় না।”
সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ৬০ ফুট চওড়া রাস্তাকে শিল্পপ্লট বানানোর পর প্রতিকাঠা দেড় লাখ টাকা দরে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার প্রতি কাঠার বাজারমূল্য কমপক্ষে এক কোটি টাকা।
শফিক রেহমান, কামরুল ও জিয়ার ঢাকায় কী পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে, তা হলফনামা আকারে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দিতে বলেছে আদালত।
“আমরা এই ঘটনার গভীরের গভীরে যাব। যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, আমরা কাউকে ছাড়ব না। হলফনামায় একটা বর্ণও যদি মিথ্যা হয়, তাহলে ৫ বছরের জেল হয়ে যাবে,” তিনজনকে সতর্কও করেছেন বিচারক।
শফিক রেহমানের ‘দুর্নীতির’ প্রতিবেদন
বাংলাদেশের বন্যা দুর্গতদের জন্য লন্ডনের রেডিও স্পেকট্রামের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ এবং এর ব্যয়ের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া দিয়েছে আদালত।
রেডিও স্টেশনটির মালিকদের মধ্যে শফিক রেহমানও রয়েছেন।
এ বিষয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের তদন্তের বর্তমান অবস্থাও হাইকমিশনারকে জানাতে বলেছে আদালত।
তলবের আদেশে জিয়া ও কামরুল হাজির হওয়ার পর ১৬ মে শুনানি চলাকালে সরকারি আইন কর্মকর্তা বলেন, শফিক রেহমানও এভাবে প্লট পেয়েছেন।
এরপর যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদককে তলবের আদেশ হয়।
মঙ্গলবার শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, প্লট নেওয়া ছাড়াও বন্যার্তদের জন্য লন্ডনে অর্থ তুলেছিলেন শফিক রেহমান, যে অর্থ বাংলাদেশে আসেনি।
এরপর ওই বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে লন্ডনের হাইকমিশনারকে বলা হয়।
আলতাফ হোসেন বলেন, “লন্ডনভিত্তিক রেডিও স্পেকট্রামের মাধ্যমে শফিক রেহমান বাংলাদেশের বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগহ করেন। ওই রেডিও’র মালিকদের একজন শফিক রেহমান। কিন্তু পরে ওই টাকা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আসেনি।”