বার্তা ৭১ ডটকমঃ বাংলাদেশ এ ব্লগ বা ব্লগার বিষয়ে যারা ফেসবুকে নিয়মিত পক্ষে কিংবা বিপক্ষে লেখালেখি করেন তাদের লেখা পড়লে মনে পুরো বিষয় টা নিয়ে তাদের ধারণা খুব পরিষ্কার নয়। কেউ মনে করেন ব্লগার মানে হচ্ছে নাস্তিক, কেউ মনে করেন তাঁরা বামপন্থী, আবার কেউ মনে করেন তাঁরা একটি দল, যাঁদের কাজ হচ্ছে মানুষের সব ধরনের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করা। ব্লগার শব্দটি সম্পর্কে মানুষের এই ঋণাত্মক ধারণা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব ব্লগার যেমন নাস্তিক বা খারাপ নন, তেমনি সব নাস্তিকই ব্লগার নন। ব্লগ শব্দটির উৎপত্তি ‘Web-log’ বা ‘ইন্টারনেটে ডায়েরি’ লেখা থেকে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট তৈরি হয় মানুষকে লেখার সুযোগ দিতে। বেশির ভাগ ব্লগেই মানুষ তাঁদের মুক্তচিন্তা প্রকাশের পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, খেলাধুলা ইত্যাদি বিষয়েও তাদের মত প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষার ব্লগও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। আমরা কোনোভাবেই একজন ব্লগারকে (হোক সে আস্তিক অথবা নাস্তিক) সামান্যতম দৈহিক আক্রমণ বা হত্যা করা সমর্থন করি না। বরং আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা করা যেতে পারে। কিন্তু তাকে আক্রমণ করার অধিকার কারও নেই। ফারাবী নামক লোকটিকে হত্যার উসকানি দেওয়ার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে তো অনেক আগেই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল! সে প্রকাশ্যে ফেসবুকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল এক বছর ধরে এবং নিহত ব্লগারের বাবা পুলিশকে এটা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিলে হয়তো এই হত্যাকাণ্ড হতো না। পরবর্তী সময় আরেকজন নিহত হলেন। জানা গেল, কয়েকজন ছাত্র (যাঁরা ব্লগ কী জানেন না) তাঁকে তাঁদের হুজুরের নির্দেশে হত্যা করেছেন ইমানি দায়িত্ব পালনের অজুহাতে! ওই সব জঙ্গি সংগঠনগুলি ওত পেতে থাকে সামান্যতম ছুঁতার জন্য, যাতে তাঁরা আক্রমণ চালাতে পারে। তাঁরা ধর্মের পোশাক পরা অমানুষ।
বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে একথা বলাই যায় যে, বাংলাদেশ প্রগতিশীল এবং যুক্তিবাদী ব্লগার, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য নিরাপদ নয়৷ উগ্রপন্থীরা সবাইকে প্রকাশ্য এবং জনাকীর্ন পরিবেশে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে৷” অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বের্নহার্ড হার্টলাইনও মনে করেন, বাংলাদেশ এখন আর ব্লগার এবং মুক্তমনাদের জন্য নিরাপদ নেই৷ ব্লগার দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অ্যামনেস্টি শোকাহত জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা আশা করেন বাংলাদেশ সরকার ব্লগার এবং সাংবাদিকদের নিরাপদ রাখতে কাজ করবে৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্লগার হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাননি৷ তাঁর ছেলে এবং অন্যতম উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷
লেখকঃ মোঃ রাসেল মজুমদার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট