ঢাকা, ২৩ মে: হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামালায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৩ নেতার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জহুরুল হকের আদালতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত জামিন আবেদনের শুনানি চলে। এরপর দুপুরে আদালত তার আদেশে জামিন আবেদন নামঞ্জুরের ঘোষণা দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে জামিন শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মোসলেম উদ্দিন জসিম, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, খোন্দকার মাহবুব হোসেন। তাদের সহায়তা করেন আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান, জয়নাল আবেদিন মেজবাহ, তাহেরুল ইসলাম, মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ শতাধিক বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী।
শুনানিকালে তারা বলেন, এসব আসামির নামে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। নিছক রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য তাদের এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।তাই তারা জামিন পেতে হকদার।”
তারা বলেন, “মামলার যে ধারা তা জামিনযোগ্য। তাই জামিনযোগ্য ধারায় তাদের জেল হাজতে আটক রাখার কোনো সুযোগ নেই। এসব সিনিয়র নেতারা কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং কেউ কেউ ঢাকার বাইরে ছিলেন। তাই তাদের এ মামলায় সম্পৃক্ত করে সরাকারের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। বিষয়টি দেশের মানুষের কাছে হাস্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।”
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি আব্দুল্লাহ আবু, খোন্দকার আব্দুল মান্নান, আব্দুর সাত্তার দুলালসহ কোর্টের অতিরিক্ত পিপিরা আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “মামলার ধারা যাই হোক না কেন, ঘটনা প্রভাবে প্রমাণ করে তারা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাই তাদের জামিন দেয়া সমীচীন হবে না।”
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পরে আদেশ দেবেন মর্মে রেখে দেন। পরে বেলা দুইটায় আদালত তাদের জমিন নামঞ্জুরের করে আদেশ দেন।
তবে ঢাকা বারের নেতাদের নামে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হওয়ায় তাদের কাউকে আদালতে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।
এ আদেশের পর বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে তারা আটকৃত নেতাদের মুক্তির দাবি করেন।
এদিকে, গত ১৭ মে সন্ধ্যায় পৃথক ১৫টি আবেদনের মাধ্যমে জোটের ৩৩ নেতারই জামিন চাওয়া হয়। তবে কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় অ্যাডভোকেট পাপ্পু নামক এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে ৩০ বিএনপি নেতাকর্মীকে ৫৪ ধারায় কোতোয়ালী থানা পুলিশ আটক করে।
গত বুধবার মির্জা ফখরুলসহ জোটের নেতারা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আত্মসর্মপণ করে জামিন চাইলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. এরফান উল্লাহ জামিন আবেদন নাকচ করে সবাইকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওইদিন জামিন নাকচের পর আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে জামিন আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারক তাও নাকচ করে দেন।
গত ২৯ এপ্রিল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের পর রাত ৯টা ৫ মিনিটে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইসমাইল মজুমদার বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় দ্রুত বিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৪ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
এদিকে মির্জা ফকরুল ইসলামসহ ১৫ জন নেতাকে শাহবাগ থানার একটি মামলায় হাই কোর্ট থেকে জামিন দেয়া হলে তার বিষয়ে সিএম এম আদালতে বেলবন্ড দাখিল করলে আদালত প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকার বন্ডে জামিননামা দাখিলের অনুমতি দেয়। তবে তাদের পক্ষে তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বেলবন্ড জমা দিলে তা কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করে তা ফেরত পাঠায়।