মেয়েটির নাম ফাতেহা বেগম। বয়স ১৩ কিংবা ১৪ বছর। এই বয়সে মেয়েরা সাধারণত লেখাপড়া ও খেলায় মেতে থাকে। কিন্তু ফাতেহার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। ৬০ বছরের বজলুর রহমান পিতা ও বিমাতাকে ফুঁসলিয়ে ফাতেহাকে মৌখিকভাবে বিয়ে করে। এরপর টানা এক মাস কিশোরী ফাতেহাকে নিয়ে সংসার করে। তবে এই বিষয়টি জানতেন না এলাকার মানুষ। এক মাস পর বজলুর রহমান তাকে নিয়ে এলাকায় এলে তারা ক্ষেপে ওঠেন। ফাতেহার ভাই ডালিমসহ এলাকার মানুষজন এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করলে পালিয়ে যায় বজলুর রহমান। এই ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরের মাটি গ্রামে। গত তিন দিন ধরে এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। সাধারণ মানুষজনের মুখে মুখে রটছে বিয়েপাগল বজলুরের কেচ্ছা। ফাতেহার বাড়ি গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরে। তার পিতা ফজলুল হক। পেশায় ভিক্ষুক ফজলুল হক সন্তানদের নিয়ে ঠাকুরের মাটি এলাকার একটি কলোনিতে ৫০০ টাকায় ঘর ভাড়া করে থাকে। অভাব অনটনের সংসার থাকায় ২য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে ফাতেহা। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তার ভাইয়েরা এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে। দেখতে বেশ সুন্দরী হওয়ায় কিশোরী ফাতেহার ওপর চোখ পড়ে ৬০ বছরের বজলুরের। তার বাড়ি জকিগঞ্জে। সে বটেশ্বরে কাজ করে। বেশ ধনীও। কিন্তু বিয়ে করা তার নেশা। ইতিমধ্যে ৪-৫টি বিয়ে করেছে বলে এলাকার লোকজন বলাবলি করছে। ফাতেহাকে বিয়ে করার আগে পার্শ্ববর্তী হরিপুরের শিকারখা গ্রামের এক কিশোরীকে বিয়ে করে। ওই বিয়েতেও স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদী হলে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুচলেকা ও মোহরানা দিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করেন। কিশোরী ফাতেহার ভাই ডালিম ও ঠাকুরের মাটি এলাকার স্থানীয় মেম্বার হাজী মছব্বির আলী জানিয়েছেন, এলাকায় আসা-যাওয়ার সুবাদে বিয়েপাগল বজলুরের চোখ পড়ে কিশোরী ফাতেহার ওপর। এরপর বজলুর ফাতেহার পিতা ভিক্ষুক ফজলুল ও সৎভাই শুকুরের সঙ্গে খাতির করে। তাদের টাকা পয়সা দেয়া ছাড়াও চাকরির প্রলোভন দেখায়। বিয়ে পাগলের কথায় সায় দিয়ে এক মাস আগে পিতা ও সৎভাই ফাতেহাকে পাঠিয়ে দেন দরবস্ত এলাকায় তার চাচাতো ভাইয়ের বাসায়। সেখানে কোন কাবিন ছাড়াই বজলুর রহমান কিশোরী ফাতেহাকে বিয়ে করে। এরপর টানা এক মাস সে ফাতেহার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতেই স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে। ফাতেহার ভাই ডালিম আহমদ বলে, আমি এ ঘটনার বিচার চাই। এক কিশোরীর সঙ্গে বৃদ্ধের মৌখিক বিয়ে দিয়ে আমার বোনের সর্বনাশ করা হয়েছে। সে কিশোরী হওয়ায় এখনও বুঝতে পারছে না তার কি ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনে তিনি আইনের দ্বারস্থ হবেন। এ ব্যাপারে ঠাকুরের মাটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন মেম্বার হাজী মছব্বির মিয়া জানান, বিয়েপাগল বজলুর পলাতক রয়েছে। তার বাড়ি-ঘরের ঠিকানা খোঁজা হচ্ছে। এরপর এ ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে। ফাতেহা বেগম মানবজমিনকে জানায়, তার পিতার কথায় সে বিয়ে করেছে। এর বেশি কিছু জানে না সে। তবে এক মাস এক সঙ্গে বসবাস করলেও বজলুর তাকে তার ঠিকানা এমনকি মোবাইল নম্বর পর্যন্ত দেয়নি।