শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলার সমালোচনাকারী বিএনপি নেতাদের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই আইন প্রণয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেছেন, “বিএনপি নেতারা যে আইনে আটক হয়েছেন, সে আইন পাস করার সময় আমরাই বিরোধিতা করেছিলাম। একইসঙ্গে এটাও বলেছিলাম, এ আইনে হয়ত আপনারাও একদিন পড়তে পারেন।”
হরতালে গাড়ি পোড়ানো এবং সচিবালয়ে বিস্ফোরণের দুই মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের ৩৫ নেতা বর্তমানে কারাবন্দি। জামিন চাইলেও তাদের সে আবেদন আদালতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
সুরঞ্জিত বলেন, “আইন করার সময় চার্জশিট দেওয়ার পর জামিনের বিধান তারাই রাখেনি।”
“এটা আমার চেয়ে মওদুদ সাহেব ভাল জানেন,” মামলায় জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় সমালোচনামুখর সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের বক্তব্যের জবাব আওয়ামী লীগ নেতার।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ভাষাসৈনিক বাহাউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভায় দেশর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন সুরঞ্জিত।
ব্যক্তিগত সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির পর পক্ষকাল রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকার পর ওই ঘটনায় রেল বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সভায় সরব হয়ে উঠছেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত।
বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সংবিধান সংশোধনে বিরোধী দলের প্রস্তাব এবং সংলাপ নিয়েও কথা বলেন।
‘প্রস্তাব দিন, আলোচনা হবে- কথা দিলাম’
আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল সম্ভবপর নয় জানিয়ে বিরোধী দলকে এর বিকল্প প্রস্তাব সংসদে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন সুরঞ্জিত।
সর্বশেষ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান বলেন, “সংসদে আসুন, বিকল্প প্রস্তাব দিন। কথা দিলাম- বিকল্প প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করলে তা নিয়ে আলোচনা হবে, ভোটে দেওয়া হবে না।”
“যদি বিএনপির কাছে বিকল্প প্রস্তাব থাকে; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধনেও রাজি আছে সরকার। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্ব এদেশে আর হবে না,” বলেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে দুই প্রধান দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে পুনরায় ‘ওয়ান-ইলেভেন’র মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা অনেকে করলেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত।
“যারা আর একটি ওয়ান ইলেভেনের ভয় দেখাচ্ছেন, তাদের বলতে চাই- পৃথিবীতে সে পরিস্থিতি এখন নেই। চারদিকে গণতন্ত্রের জয়জয়কার। সুতরাং আগামীতে শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে,” বলেন তিনি।
তবে ওই সভায় বক্তব্যে মহাজোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের খেলোয়াড়রা মাঠে। এখন বিবৃতির পর বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। টক শোর পর টক শো করা হচ্ছে। এতে গণতন্ত্রকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”
সংলাপ প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত বলেন, “সংলাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংলাপ নতুন কোনো তত্ত্ব নয়। কিন্তু সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে কোনো সংলাপ হবে না।”
মেনন বলেন, “তাল গাছ আগে দিতে হবে এরপর সালিশ মানব- এই মনোভাব থাকলে, কোনো বেকুবই সে সালিশ মানবে না।”
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ওই স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সভাপতি এ টি এম শামসুজ্জামান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আশফাক চৌধুরী অংকুর প্রমুখ।