বার্তা৭১ ডটকমঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ রাতে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি অফিসার হিসেবে গুলি চালিয়েছে, সে কথাটা সবাই ভুলে যায়। সে (জিয়া) তো আগাগোড়াই পাকিস্তানের দালালি করেছে। তার জন্মই তো ওখানে (পাকিস্তান)। লেখাপড়াও পাকিস্তানে। চাকরি সূত্রে এখানে এসেছিল। বিয়ে করে পরবর্তীতে এখানে থেকে যায়।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, সবাইকে কিন্তু সম্মান দেওয়া হয়েছে। জিয়াকে মেজর থেকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। আর সে (জিয়া) বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছিল এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল।’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই আলোচনা সভায় যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে যারা দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ক্ষমতা নিয়ে মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, যারা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী আশা করে? আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাত্র ১২ বছরে দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। এটা বোধহয় তাদের একটুও পছন্দ না। কারণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সফল হোক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সফল হোক, বাংলাদেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত হবে—এটা তো তাদের পছন্দ না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছে এবং বিলাসব্যসনে জীবন ভাসিয়েছে। তারা এ দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝবে কী করে? তাদের স্বার্থে ইতিহাসকে তারা বিকৃত করেছে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ওরা কী বলল, এটা নিয়ে আমাদের কথা বলার দরকার নেই। এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করারও কিছু নেই। আমরা জনগণের পাশে আছি। জনগণের জন্য আমরা কাজ করি। এই করোনাভাইরাসের সময় কত কথাই তো তারা বলেছে এবং টিকা নিয়েও কত কটূক্তি করেছে। কিন্তু সেই টিকা তো তাদের নিতে হলো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সরকারে আছি, পয়সা দিয়ে টিকা কিনে বিনা পয়সায় দিচ্ছি। সেই বিনা পয়সার টিকা তো তারা নিয়েছে। বিএনপি নেতারা নেয়নি? সবাই নিয়েছে। কিন্তু তার আগে তাদের কথাগুলো কী ছিল? ওরা ওভাবেই বলবে। আমার মনে হয়, ওদের কথা নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট না করে, আমি এটুকু বলব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি দক্ষ রণকৌশলী ছিলেন। তিনি এদেশের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালি জাতিকে বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালাল, সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পিলখানার ইপিআরের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে প্রচার করা হয়। রেডিও, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে। ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীন বাংলা অর্থাৎ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকেও ঘোষণাটি প্রচার করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা একের পর এক সেই ঘোষণার কথা প্রচার করতে থাকে। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী সাহেব বললেন, আমরা তো ঘোষণা দিয়েই যাচ্ছি, সেনাবাহিনীর কাউকে নিয়ে আসো, তাহলে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ মনে হবে।’
‘চট্টগ্রামে ওই সময় মেজর রফিক (সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম) অ্যামবুশ করেছিলেন। প্রথমে মেজর রফিককে এসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি রেডিওতে পাঠের কথা বলা হয়। তখন মেজর রফিক বলেন, আমি এখানে অ্যামবুশ করে বসে আছি। আমি যদি এখান থেকে সরে যাই, তাহলে পাকিস্তানিরা এই জায়গাটা দখল করে নেবে। তখন জিয়াউর রহমান যেহেতু জনগণের কাছে ধরা ছিল, তাকেই ধরে নিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটা পাঠ করতে বলা হয়। পরে জিয়াকে তারা (বিএনপি) ঘোষক বলে প্রচার চালায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ ‘মুক্তির ডাক’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।