বার্তা৭১ ডটকমঃ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল সমর্থনে সকাল থেকে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের এলাকা। রোববার (২৮ মার্চ) শহরের সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান, দু’টি মন্দির, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শহরজুড়ে সর্বত্র এখন ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। পোড়া গন্ধ চারদিকে।
সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি চালালে ও টিয়ার শেল ছুড়লে হতাহত হয় বলে জানা গেছে। বিকেল নাগাদ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অন্তত ২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সবমিলে গত তিনদিনে জেলায় নয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হরতাল সমর্থনকারীরা। তারা থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালায়। পরে, সেখান থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিহাতা গ্রামের আলতাব আলী ওরফে আলতু মিয়ার ছেলে হাদিস মিয়া ওরফে কালন মিয়া (২৩) ও কুট্টাপাড়া গ্রামের সুফি আলীর ছেলে আল আমীন (১২)। পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হয়েছেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, নিহত আরেক যুবকের পরিচয় পাওয়া যায় নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নুরুস শামস তিনজনের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে, শিশু আল আমীনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে তার মৃত্যু হয়। আর হাদিস মিয়া আগেই মারা যান।
হামলার ঘটনা ঘটেছে জেলার প্রেসক্লাবেও। এ সময় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক রিয়াজউদ্দিন জামি মাথায় আঘাত পান। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা ট্রেনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করা হয়। সকালে ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের পৌঁছালে ট্রেনের ইঞ্জিন ও কোচের কাচ ভাঙচুর করা হয়। পরে ট্রেনটি ফিরিয়ে ভৈরবে নিয়ে আসা হয়েছে।
ট্রেন যেন চলাচল করতে না পারে, সে জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে আশপাশের রেলগেটের ব্যারিকেড বাঁকা করে ফেলা হয়েছে। রেললাইনের ক্ল্যাম খুলে ফেলা হয়েছে। শহরের মূল সড়কের অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে রাস্তা আটকে ফেলা হয়েছে।
আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজায় থাকা পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে, এসব বিষয়ে পুলিশের কোনো দায়িত্বশীল সূত্র কথা বলতে চায়নি। তবে, সদর থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আজকের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে জানান জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।