দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়ের খাত তৈরী পোশাক শিল্পে অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে ১৭ শ্রমিক নেতা-নেত্রীর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এই প্রথম ৪ জন গোয়েন্দা নজরদারিতে এলো। রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা একটি তালিকা ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সমপ্রতি আশুলিয়া ও কাঁচপুরে শ্রমিক অসন্তোষের পর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গোয়েন্দাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আসা পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট এ নেতা-নেত্রীরা হলেন- মন্টু ঘোষ, বাবুল আকতার, শামীমা নাসরিন, নাজমা আক্তার, রুহুল আমিন, জলি তালুকদার, মোশরেফা মিশু, এডভোকেট ইসমাইল, আমিরুল হক আমির, বাহারাইনে সুলতান বাহার, জয়নাল আহমেদ, জাহানারা বেগম, ইসায়মিন আক্তার, কামরুল ইসলাম, রিপন শিকদার, রোকেয়া খানম ও বাবলী আক্তার। এ ১৭ জনের মধ্যে শেষের ৪ জনকে প্রথমবারের মতো নজরদারিতে আনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করার ক্ষেত্রে নেতাদের বাধা দেয়া হচ্ছে এবং তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মোশরেফা মিশু এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, এদেশ চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পরিচালিত হয়। তাই তাদের ইচ্ছাতেই সরকারের বিশেষ বিশেষ বাহিনী দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শুধু গ্রেপ্তার নয়, গুম করে ফেলার হুমকিও নাকি দেয়া হয়েছে কয়েকজনকে। মিশু আরও বলেন, গোয়ন্দা নজরদারি বাড়িয়ে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা রোধ করা সম্ভব নয়। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে শ্রম অসন্তোষ থামবে না।
আমিরুল হক আমির বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে গত সাড়ে ৩ বছর ধরেই। নতুন করে আর কি? সর্বোচ্চ গ্রেপ্তার করা হবে। তবে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা না দিলেও শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতে দিচ্ছে না। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবশ্যই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। পোশাক শিল্প নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র যেন দানা বাঁধতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারের যা কিছু করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই করা উচিত। শ্রমিক নেতাদের উস্কানির কারণে নিরীহ ও সাধারণ শ্রমিকরা ভাঙচুর ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মামলার আসামি হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিজিএমইএ সরকারকে আগেও অনুরোধ করেছে, এখনও করছে। উল্লেখ্য, সমপ্রতি আশুলিয়ায় শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজবে এবং কাঁচপুরে শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষের ওপর হামলার ঘটনার জের ধরে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এ সময় শ্রমিকরা কারখানাগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে এসব ঘটনায় কমপক্ষে ২ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। এছাড়া পোশাক শিল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে অপব্যাখ্যা দিয়ে এ শ্রমঘন শিল্পকে আবারও অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করার অভিযোগ রয়েছে।