বার্তা৭১ ডটকমঃ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আগামী ৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ সব তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বাবলম্বী করাই বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম লক্ষ্য।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মো. মোজাফ্ফর হোসেনের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী শান্তি সম্মেলন আয়োজনে কাজ কররে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দু’দিনের এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও মানবিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি আরো জানান, ওই সম্মেলনকে সফল করতে ইতোমধ্যে ৪২ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতি এবং অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদকে আহবায়ক করা হয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণের সাথে একাধিক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেবেন। ‘বিশ্ব শান্তি ও মানবতা’ এর প্রবর্তক হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর কর্মকা- ও আদর্শের আলোচনার পাশাপাশি সম্মেলনে ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’ গৃহীত হবে। সম্মেলনে ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার’ দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
সরকারী দলের সদস্য আনোয়ার হোসেন খাওে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, গণতন্ত্র ও স্থানীয় সরকারের দাবি সবসময়ই পরস্পরকে গতিময় করেছে। গণতান্ত্রিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় সংস্থার প্রতিনিধি জনগণের স্বার্থকে তুলে ধরতে পারে। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, সংবিধানের আলোকে সব অঞ্চলে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা গ্রামই সব উন্নয়নের মূল কেন্দ্র। গ্রামের উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যখন বেগবান হবে তখন গোটা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সম্মুখপানে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের প্রতিটি গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩-৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত ও প্রসারিত করতে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের ৫টি স্তরকে (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) আরো শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করে অধিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিবিড় ভূমিকা পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনগুলো যুগোপযোগী করে সংশোধনের প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে।
সংসদ নেতা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারের অন্যতম প্রধান ও ভিত্তি স্তর। ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী, স্বাবলম্বী, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন: ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণ জনগণকে সবধরণের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে একটি ছাতা পরিষেবা প্রদান ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালুসহ জুলাই ২০১১ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) চলমান রয়েছে। যার মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে ২ হাজার ৪০৭টি, ২য় পর্যায়ে ৮৮৭ টি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৪৪টি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন আরো আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়) চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তৃণমূলের জনগণের কাঙ্খিত সেবার মান বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩) বাস্তবায়িত হচ্ছে। পল্লী এলাকার দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং নারীরা যাতে দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে বিচারের সুফল পেতে পারে সে লক্ষ্যে ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে বর্তমানে দেশের ২৭টি জেলার ১৩৫টি উপজেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে জনঅংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ১৮টি উপজেলা ও ২৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।