ঢাকা, ৫ জুন: সংসদে উচ্চ আদালত সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল অপরাধ করেছেন’ মন্তব্য করায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক’কে অপসারণে প্রধান বিচারপতির প্রতি ‘আহ্বান’ জানিয়েছেন সরকারদলীয় প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী’র ‘বিচারপতি থাকার অধিকার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং ‘নির্লজ্জ’ আখ্যা দিয়ে তার বেঞ্চের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের প্রবল সমালোচনা করেছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে’ সংশ্লিষ্ট বিচারককে ‘অপসারণ করা’র ‘আহ্বান’ জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতির প্রতি। তারা বলেন সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণ না করা হলে ‘সংসদ তার সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে’ সংশ্লিষ্ট বিচারককে অপসারণ করবে।
সংসদ সদস্যরা উল্টো সংশ্লিষ্ট বিচারককে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ‘মানুষকে অপমান করা’ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনে’র বেঞ্চের ‘প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে’।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ মঙ্গলবার বলেন, জাতীয় সংসদে উচ্চ আদালত সম্পর্কে মন্তব্য করে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ করেছেন। এ অপরাধের দায়ে স্পিকারকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মন্তব্য করেন আদালত।
আদালত বলেছিলেন, ‘‘একই সঙ্গে বারের একজন সদস্য হিসেবে বিচার বিভাগ সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করায় আইনজীবী হিসেবে স্পিকারের সনদ থাকা যায় কি-না তা নিয়েও ভাবতে হবে।”
‘এই বিচারপতিকে তার পদ থেকে অপসারণ করুন’
সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগী মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিচারপতি মানিক স্পিকারকে নিয়ে কটুক্তি করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাই তার আর এই পদে থাকার কোন অধিকার নেই। সংবিধানকে সম্মুন্নত রাখতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আর্কষন করে বলছি, এখনই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে এই বিচারপতিকে তার পদ থেকে অপসারণ করুন।’’
সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘যদি প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নিয়ে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন না করেন, তাহলে সংসদ তার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পূর্বের ক্ষমতা ফিরিয়ে এনে এই বিচারপতিকে অপসারণ করবেন।’’
‘আমরা ক্ষমতায় এসে তাকে স্থায়ী করেছি’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর অপর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিস্ময় প্রকাশ করে পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, ‘‘বিচারপতি মানিককে আমাদের সাবেক আইনমন্ত্রী খসরু সাহেব নিয়োগ দিয়েছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাকে নিশ্চিত করেনি। আবার আমরা ক্ষমতায় এসে তাকে স্থায়ী করেছি। সে কিনা সংসদকে নিয়ে এমন মন্তব্য করে!’’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘যদি রাষ্ট্রপতি না থাকেন তাহলে তার দায়িত্ব পালন করেন স্পিকার। আর একজন স্পিকারকে নিয়ে আদালত মন্তব্য করে, তাহলে কি আদালত সংসদের উপরে?’’
তিনি বলেন, ‘‘ অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আর এই বিচারপতি মানিকের কাজ হলো মানুষকে অপমান করা। এটা তাদের টেনডেনসিতে (প্রবণতায়) পরিণত হয়েছে। এই বিচারপতি মানিক বিমানের থার্ড ক্লাসের টিকিট কেটে বিজনেস ক্লাসে বসে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় তিনি বিমানের কর্মকর্তাকে তলব করেন। কতটা নির্লজ্জ হলে এমন করা সম্ভব।’’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘আমার ইচ্ছা আছে সংসদের বাইরে মানিককে নিয়ে মন্তব্য করবো। তখন আমাকে তলব করুক। আমি আদালতে গিয়ে কথা শোনায় আসবো। কি করবে? জেলে দিবে? দিক।’’
স্পিকারকে নিয়ে মন্তব্য করায় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণেরও অনুরোধ করেন প্রবীন এই রাজনীতিবিদ।
‘এই বিচারপতিই রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল অপরাধ করেছেন’
পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকার দলের আর এক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম বলেন, ‘‘আদালতের ভাষায় স্পিকার রাষ্ট্রদ্রোহ করে থাকলে এই সংসদ, আমরা সবাই এমনকি এই সরকারও রাষ্ট্রদ্রোহ করেছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আদালতের হাত লম্বা হতে পারে তবে তা সংসদের চাইতে লম্বা নয়। আমরা চাইলে সব করতে পারি।’’
শেখ সেলিম বলেন, ‘‘সংসদের সার্বভৌমত্বে হুমকি স্বরূপ আদালতের এমন আদেশ সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন। এই বিচারপতিই রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল অপরাধ করেছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘এই বিচারপতির উচিত সংসদের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলা উচিত, আমার ভুল হয়েছে, আমি সংবিধান লঙ্ঘন করেছি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’
এসময়ে সংসদে এ বিষয়ের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত মুজিবুর রহমান চুন্নু ও ওয়ার্কাস পার্টি’র রাশেদ খান মেনন।