আগামী নির্বাচনে ১৭০ আসন ধরে রাখতে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। গতকাল সংসদীয় দলের বৈঠকে এমন আশা ব্যক্ত করেছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন লক্ষ্য নিয়ে এমপিদের নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন তিনি। বৈঠকে দলের এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দলীয় পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৩০টি আসন দলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া আরও ৩০টি আসনের অবস্থা ‘ফিফটি ফিফটি’।নুযায়ীই ২০১৪ সালের ২৫শে জানুয়ারির আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরের ২৪শে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। নেতাকর্মীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা মিটিয়ে ফেলে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি দলীয় এমপিদের এসব নির্দেশনা দেন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট ২৬২ আসনে জয় লাভ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৩০ আসন। এছাড়া নির্বাচনে বিএনপি পায় ২৯টি আসন। সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আপনারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। পিস্তল দেখাবেন না। জেলে ঢোকাবেন না।
সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকার দলীয় সভাকক্ষে বিকাল ৪টা থেকে এক ঘণ্টার এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এবিএম আনোয়ারুল হক, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, আসম ফিরোজ, শহীদুজ্জামান সরকার, সাধন চন্দ্র মজুমদার, আতিউর রহমান আতিক, তারানা হালিম, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, কায়সার হাসনাত প্রমুখ। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিগত সময়ে ৫ বছর শেষ হওয়ার পর নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এবার সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ৩ মাস আগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২৫শে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন হবে ২০১৪ সালের ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এসময় তিনি দলীয় অনুসন্ধান ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, সব এমপির আমলনামা আমার কাছে আছে। তাই এখন থেকে নির্বাচনের জন্য কাজ করুন। মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করুন। প্রধানমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরতে বলেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার বাজেট ভাবনার বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক সরকার বলেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বেগম জিয়া) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছেন। আবার বলছেন দুই বছর অসাংবিধানিক সরকার ছিল। তিনি নিজেই যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক সরকার বলছেন কাজেই আমরা আর এই অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাবো না। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রায় সব এমপিই দেশের চলমান বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন, আমরা এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। কিন্তু মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। নির্বাচনের সময় বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করতে পারছি না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনে মানুষের কাছে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সিনিয়র এমপি আমির হোসেন আমু বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে মাস্টার প্ল্যান করা প্রয়োজন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে ৩ বছরে আমরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। এ সময়ে আমাদের ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও আমরা ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। শেখ হাসিনা এ সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি সোলার প্যানেল ব্যবহারের প্রতি জোর দিয়ে বলেন, এমপিদের টিআর-এর যে বরাদ্দ দেয়া হয় এ থেকে সোলার প্যানেল বসানোর কাজে ব্যয় করলে অনেকে বিদ্যুৎ পাবেন। সমস্যা সমাধানে তা সহায়ক হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সরকারের সাড়ে তিন বছরের উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় তিনি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার এবং বিগত সাড়ে তিন বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সারসংক্ষেপের কপি এমপিদের সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, জনগণের সামনে এই অর্জনগুলো তুলে ধরতে হবে। গত নির্বাচনে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে আপনাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না। তাই এখনও দেড় বছর সময় আছে, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে উদ্যোগী হোন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। তাদের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে হবে।
নেতাকর্মীদের পিস্তল দেখাবেন না: আশরাফ
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক এমপি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, শুধু উন্নয়ন করলেই ভোট পাওয়া যায় না। জনগণের কাছে যেতে হয়। তাদের সঙ্গে ভাল করে কথা বলতে হয়। আচরণের পরিবর্তন করতে হবে। খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। পিস্তল দেখানো যাবে না। দুর্ব্যবহার করে পিস্তল উঁচিয়ে ভোট পাওয়া যায় না। আঙুল উঁচিয়ে কথা বলবেন না। মনে রাখতে হবে কর্মীদের কারণে আজ আমরা এখানে আসতে পেরেছি।