বার্তা ৭১ ডট কমঃ প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ জোট প্রার্থী করায় তার পরিবারে বয়ে গেছে খুশির বন্যা। পরিবারের সবাই রোমাঞ্চিত। এমনিতে সুরক্ষিত অর্থমন্ত্রীর বাড়ির দরজা এখন সবার জন্য খোলা। প্রণব-জায়া দু’হাতে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন সবাইকে। ভারতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে চলেছে তাদের বাবা, সেজন্য পুত্র অভিজিৎ এবং কন্যা শর্মিষ্ঠাও রীতিমত গর্বিত। তবে এতো অভিনন্দনের বার্তা আসা সত্ত্বেও তার মধ্যে প্রণব-জায়া অপেক্ষা করে রয়েছেন তার বান্ধবী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা পাওয়ার জন্য। হাসিনার সঙ্গে প্রণব বাবুদের সম্পর্ক পারিবারিক পর্যায়ের। এক সময় প্রণবের বাড়িতে হাসিনার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তখন হাসিনা দিল্লিতে থাকতেন ছেলেমেয়ে নিয়ে। সেই সম্পর্ক এখনও অটুট আছে বলেই এই শুভদিনে প্রণব-জায়ার মনে পড়েছে বান্ধবী হাসিনার কথা। তিনি বলেছেন, এ খবরে ও (হাসিনা) নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছে। ইতিমধ্যেই সম্ভবত সেই কাক্সিক্ষত ফোনটি পেয়ে প্রণব-জায়া শুভ্রাদেবী আপ্লুত হয়েছেন। কন্যা শর্মিষ্ঠাও বাবার রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নে খুশি হয়েছেন। শর্মিষ্ঠা জানিয়েছেন, দেশের জন্য তিনি সর্বদাই কাজ করে গেছেন। এখনও করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি পদে কিছুটা শান্তভাবে জীবন কাটাতে পারবেন বলেই পিতার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত শর্মিষ্ঠা এখন স্বস্তিতে। পুত্র অভিজিৎ জানিয়েছেন, ছেলে হিসেবে তো বটেই, বাঙালি হিসেবেও আমি গর্বিত। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোন বাঙালি রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। তবে এতো আনন্দের মাঝেও বিষাদের সুর শোনা গেছে প্রণবের পরিবারের সবার মুখে। কেননা, তাদের ঘরের মেয়ে ছিলেন মমতা। নানা কাজে ছুটে আসতেন প্রণব বাবুর কাছে। গত এক বছরে সেই সুসম্পর্কে ভাটার টান লেগেছিল ঠিকই। তবে তিনি যে এমনভাবে বিরোধিতার রাস্তায় যাবেন তা ভাবতে পারেননি প্রণবের পরিবারের কেউই। শুভ্রাদেবীর তো মমতার কাছে সমর্থন চাওয়ার ব্যাপারেও আপত্তি। কিন্তু রাজনীতিক প্রণবের অনেক কিছু ভাবতে হয়। তাই তো মমতাকে ছোট বোন বলে তারও সমর্থন চেয়েছেন দ্বিধাহীনভাবে। তবে প্রণব কন্যা জানিয়েছেন, মমতাদিকে ছোটবেলা থেকে চিনি। আমাদের মধ্যে একটা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদে একজন বাঙালির মনোনয়নকে কেন তিনি আটকানোর চেষ্টা করলেন সেটাই বুঝতে পারছি না। এদিকে প্রণবের দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে পড়ছে পুরনো একটি ঘটনার কথা। একদিন দিল্লিতে প্রণবের বাড়িতে বসে রাষ্ট্রপতির ঘোড়াগুলোর যত্ন-আত্তি দেখে প্রণব বাবু দিদিকে বলেছিলেন, পরের জন্মে রাষ্ট্রপতির ঘোড়া হয়েই জন্মাবো। কী নাদুসনুদুস চেহারা। কী যত্ন-আত্তি। এটা শুনে দিদি ছোট ভাই পল্টুকে (প্রণব বাবুর ডাক নাম) বলেছিলেন, বালাই সাট, ঘোড়া হবি কেন। রাষ্ট্রপতিই হবি। আর সেটা এ জন্মেই হবি। দিদির সেদিনের কথার কথা এতো বছর বাদে সত্যি হতে চলেছে জেনে দিদির চোখ ভরে এসেছে আনন্দাশ্রুতে। অন্যদিকে প্রণবের নিজের গ্রাম বীরভূমের কীর্ণাহার এবং নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরেও এখন চলছে বিজয় উৎসব।