পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে কানাডা পুলিশ ‘বেশ কিছু’ তথ্য দেবে জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, তারা ‘নাটের গুরুদের’ ধরার চেষ্টা করছেন।
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের হুইপ নূর আলম চৌধুরী লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন চেয়ারম্যান।
নিক্সন চৌধুরী মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কর্মকর্তারা।
দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এড়াতে একপ্রকার দৌঁড়ে গাড়িতে ওঠেন নিক্সন, যিনি পারিবারিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিতা কনস্ট্রাকশনস ও মহাখালীতে একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের দেখভাল করেন।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক কিছু তথ্য-উপাত্ত দুদককে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে জোরেসোরে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।”
তিনি জানান, এই অনুসন্ধানের বিষয়ে এ মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথম দিকে কানাডীয় পুলিশের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাবে দুদক।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে সম্প্রতি আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে কানাডা। দুদক ওই দুই ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
“আমরা নাটের গুরুদের ধরতে জাল পেতেছি। সেখানে বড় মাছ ধরা পড়বেই। দালিলিক প্রমাণ ও সাক্ষ্য পাওয়া গেলে এ বিষয়ে কোনো ব্যক্তিকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
‘নিক্সন চৌধুরীর সম্পৃক্ততা’
নিক্সন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়গুলো যাচাই করতেই তাকে আমরা জিজ্ঞাসবাদ করেছি।”
চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আর কিছু না বললেও দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা৭১ ডটকমকে জানান. কানাডীয় পুলিশ কিছূদিন আগে এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে আটক করেছিল। এদের একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রমেশ, অন্যজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইসমাঈল।
“রমেশের পরামর্শেই নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসমাইল এবং বাংলাদেশে তাকে এসএনসি লাভালিনের প্রতিনিধির পক্ষে কাজ করার প্রস্তাব দেয়।”
জিজ্ঞাসাবাদে নিক্সন চৌধুরী এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলেও তদন্তে নিয়োজিত ওই দুদক কর্মকর্তা জানান।
মূল সেতু নির্মাণ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিতের পর বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এক দফা তদন্তের পর গত ২ ফেব্রুয়ারি দুদক জানায়, মূল সেতু নির্মাণে প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি। তবে পরামর্শক নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে তাদের তদন্ত চলছে।
গত বৃহস্পতিবার সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে ওঠা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মূল্যায়ন কমিটি পরামর্শক হিসেবে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল।
এর প্রথমটি ছিল এসএনসি-লাভালিন। অন্যগুলো হলো- যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান হালক্রো গ্রুপ ইউকে, নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান একম অ্যান্ড এজেডএল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি হাই পয়েন্ট রেলেন্ড।