মানবপাচার রোধে আইন ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করায় যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবপাচার রিপোর্টে (ট্রাফিকিং ইন পার্সনস-টিআইপি) বাংলাদেশকে ‘নজরদারির তালিকা’ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত এই রিপোর্টে বাংলাদেশকে স্থান দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের (টিয়ার টু) তালিকায়, যারা গত তিন বছরে মানবপাচার রোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় এবং যৌনকর্মী ও গৃহকর্মী হিসেবে ব্যবহারের জন্য অভ্যন্তরীণ অভিবাসনসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এই রিপোর্ট প্রকাশ করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মানবপাচার রোধের অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে অগ্রগতির একটি স্বচ্ছ চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে প্রকাশিত রিপোর্টে। আমরা কি আগের অবস্থানে আছি, এগিয়েছি, নাকি পিছিয়ে গেছি- তা-ও উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়, গত বছর ‘মানবপাচার রোধ ও দমন আইন’ পাস হওয়ায় এবং চলতি বছরের মে মাসে ‘মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়নসহ গত এক বছরে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরের রিপোর্টে বাংলাদেশসহ ১৮৬টি রাষ্ট্র ও অঞ্চলের মানবপাচার পরিস্থিতির বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। মানবপাচার ও অপরাধ প্রবণতার মাত্রার ভিত্তিতে দেশগুলোকে চারটি ধাপে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। যেসব দেশ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণে ব্যর্থ তাদের প্রথমে দ্বিতীয় ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রাখা হয় দ্বিতীয় ধাপের পর্যবেক্ষণ বা নজরদারির তালিকায়। পরপর তিন বছর এই নজরদারির তালিকায় থাকার পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ওই দেশকে চতুর্থ ধাপে স্থান দেয়া হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে। এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণলায় বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, পর্যবেক্ষণের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারায় বাংলাদেশের আর কোন ‘বিরূপ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার’ ঝুঁকি থাকলো না। পাশাপাশি এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘উজ্জ্বল’ হবে বলেও উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।
মার্কিন দূতাবাসের প্রশংসা: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মানবপাচার রিপোর্টে (টিআইপি রিপোর্ট) ঘোষণার পর গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, এবারের টিআইপি রিপোর্টের মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘স্বাধীনতার অঙ্গীকার’। এই ধারণাটি মানবপাচারকারীদের শাস্তি প্রদান, মানবপাচারের যারা শিকার তাদেরকে সেবা ও আইনি সহায়তা প্রদান এবং মানবপাচার অপরাধ সংঘটিত হওয়া রোধ করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রতিটি সরকারকে আধুনিক মানবপাচার বিরোধী আইনে ও আন্তর্জাতিক প্রটোকলে সন্নিবিষ্ট দাসত্ব থেকে মুক্তির অঙ্গীকার পালনে উৎসাহিত করে। মানবপাচারের শিকারদের নিরাপত্তা আইন (ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রটেকশান অ্যাকট- টিভিপিএ)-এর আওতায় টিআইপি রিপোর্টটি আধুনিক দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সরকারসমূহের লড়াইয়ের প্রচেষ্টার মূল্যায়ন করে। ২০১১ সালে ঐতিহাসিক ‘মানবপাচার রোধ ও দমন আইন’ পাস করা এবং চলতি বছরের মে মাসে ‘মানব পাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়নসহ বিগত বছরে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের জন্য এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপ নিশ্চিত করে মানবপাচারের মোকাবিলা করার মতো একাধিক অংশীদার নিয়ে গঠিত একটি সমন্বিত আইনগত কাঠামো বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হবে মানবপাচার প্রতিরোধ, সুরক্ষা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নতুন এ আইন এবং কর্মপরিকল্পনার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগও। মানবপাচার মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাসমূহকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোরালোভাবে সমর্থন করে বলেও জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।