২০১২-১২ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহাজোটের এমপিরা। বিদ্যুৎ সমস্যার আশু সমাধান দাবি করে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, তা না হলে বিরোধী দল আগামী নির্বাচনে সুবিধা নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে সরকারকে সতর্কবার্তা দেন।
সাবেক বিদ্যুৎমন্ত্রী রফিকুল বিদ্যুৎ সঙ্কট সমাধানে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন।
কয়েকদিন আগে সংসদে একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন মহাজোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের কার্যকরি সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল।
প্রন্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার মুজিবুল হক বলেন, “বিদ্যুৎ আগামী নির্বাচনে একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। গ্রামের মানুষ শুধু বিদ্যুৎ চায়, বিদ্যুৎ আর বিদ্যুৎ।
“চাহিদা বাড়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও তা কাজে লাগছে না। বিরোধী দল যেন নির্বাচনে এই সুযোগ নিতে না পারে,” সরকারকে সতর্ক করেন তিনি।
বিদ্যুতের চাহিদা ঠিকভাবে নিরূপণ করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “বিদ্যুতের চাহিদা কারা, কীভাবে নিরূপণ করছেন, আমরা সংসদ সদস্যরা তার কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“চাহিদা অনেক বেশি, এজন্য উৎপাদন হলেও ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে,” বলেন তিনি।
বর্তমান সরকারের তিন বছরে তিন হাজারের বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলেও চাহিদা পূরণ না হওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি শামাল দিতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৭ জুন বাজেট বক্তৃতায় ‘লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগের’ কথা স্বীকার করেন। “লোড-শেডিংয়ের দুর্ভোগ এখনো পোহাতে হচ্ছে। উন্নয়নের পথ চলতে গিয়ে সব কাজের সফলতা শুরুতে দেখা যায় না,” বলেন তিনি।
তার আগে তিনি বলেছিলেন, বিদ্যুতের চাহিদার সঠিক হিসাব করা হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক গত রোববার সংসদে জানান, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে উৎপাদন ৫ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
মূল চাহিদা সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট হলেও ‘ডিমান্ড সাইজ ম্যানেজমেন্ট’র মাধ্যমে তা ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটে সীমিত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে ২০১৩ সালের মধ্যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ২৯৪ মেগাওয়াট পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে।
বাজেট নিয়ে আলোচনা
বাজেট পাসের আগে এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে সাবেক মন্ত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, “অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রণয়ন করে আমাদের সঙ্গে বসতে চান, ততদিনে ওনার বাজেট বক্তৃতা ছাপা হয়ে যায়।”
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, “একজন এমপি হিসাবে বাজেটে আমার কী ভূমিকা, তা জানি না। আমার ভূমিকা উপদেশ দেওয়া।
“জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে বাজেট প্রণয়নে আমি ভূমিকা রাখতে চাই। প্রয়োজনে এজন্য সংবিধান সংশোধন দরকার।”
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানোর দাবি জানান। বৃষ্টির আগেই মহাসড়কগুলো সংস্কার করার দাবিও জানান তিনি।
ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়িতে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়া বন্ধের দাবিও জানান মুজিবুল। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে একটি আইন করার দাবিও জানান তিনি।