বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক অভিন্ন। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটির কোনো ইতিহাস নেই। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য। আর এই কারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় থাকবেন, সে চিন্তা তিনি কখনো করে নাই। বাংলাদেশের মানুষের যে হাজার বছরের স্বপ্ন ছিল বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সেই স্বপ্ন তিনি পূরণের জন্যই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্টি তা মেনে নিতে পারে নাই। সামরিক জান্তা আইয়ুব খান আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেনি। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার লোক এক গিয়েছিলেন তাই তারা সফল হতে পারেনি। পাকিস্তান সরকার দুই, দুই বার বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো, তিনি মৃত্যুকে উপেক্ষা করেছিল এবং তিনি কারো কাছে মাথা নত করেননি। বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা, দেশপ্রেম, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে তিনি দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন।
বার্তা ৭১ ডটকম এর সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এস এম কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম পা রেখেই, বিমানবন্দর থেকে বাসায় না ফিরে সরাসরি চলে আসেন রেসকোর্স ময়দানে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে। বঙ্গবন্ধুর একটি কথার মাধ্যমে বুঝা যায়, বাংলার মানুষ তার কতটা আত্মার আত্মীয় ছিলেন। সেদিন যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ডেভিট ফোর্স তাকে প্রশ্ন করেছিলো, আপনার জন্য লাহোর কারাগারে জেলের পাশে যখন কবর খোড়া হয় তখন আপনার কার কথা বেশি মনে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলে ছিলেন, বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের কথা, তারপর আমার স্ত্রী ও সন্তানের কথা। সেখানে গিয়ে জাতির জনক বলেছিলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্থহীন হবে, যদি বাংলার মানুষের পেটে ভাত না থাকে, মানুষের পরনে কাপড় না থাকে, আমার বেকার ছেলেরা কাজ না পায়। সেই লক্ষ নিয়ে তিনি অর্থনৈতিক কর্মসূচি দেন। এর কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে হত্যা করে । যখন তাকে হত্যা করা হয় তখন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণর পথে ছিলো। মাথা পিছু আয় ছিলো ১৭৩ ডলার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানের আদলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিলো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, মেজর জিয়া আইয়ুব খানের স্টাইলেই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর, তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছিল। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্য যদি বেঁচে থাকে তাহলে তার নেতৃত্বে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তারা কারাগারে জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করে। সেই সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা দেশের বাইরে ছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে যাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন আর দেশের জনগণ, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে লোকজন তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজ বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার সব আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এবং বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বরাজনীতিতে অবস্থান করে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ শে জুন। এদিন বাঙালির ইতিহাসে এক অনন্য দিন। কারণ এই দিনে বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছিল। তার নাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের কথা বলে, কৃষক ও শ্রমিকের কথা বলে। যিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের দেশের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর এই চলার পথকে মসৃণ করা উচিত। যারা তাঁর এই চলার পথকে বাধাগ্রস্ত সৃষ্টি করছে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের ২০২২ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই শপথ হওয়া উচিত।
বিএনপির বিভিন্ন দল নিয়ে ঐক্য করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যারা পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছিল সেই শক্তি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলিম-লীগ, যুদ্ধাপরাধী ও বাম শক্তি এক সাথে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো। তারা তখন মানুষ হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই শক্তিকে নিয়ে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধের দল, মুসলিম-লীগের দল, অতি বিপ্লবীদের দল। তাদের নিয়ে জিয়া বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে। যাতে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে নিতে পারে। এই শক্তি শেখ হাসিনার বিরোধিতা করছে। যারা আন্দোলনের কথা বলে তাদের আন্দোলন আমরা দেখেছি। এদের আন্দোলন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। জনগণ এদের বিশ্বাস করে না। এরা অতীতেও কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আরও বড় জোট করেছিল, সফল হয়নি। সুতরাং আজও তারা নতুন জোট নিয়ে সফল হবে না।
খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন মির্জা ফখরুলের এমন কথার জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, মির্জা ফখরুল একজন পাগল। মির্জা ফখরুল তার চিন্তা চেতনায় কথা বলে না। সে কথা বলে তারেক জিয়ার কথা মত। মির্জা ফখরুল যা বলে তার সবকিছু হলো তারেক জিয়ার কথা। আজ বিএনপি জামাতের মত কিছু বিশ্ববেহায়া ও ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে দেশ। এরা বিশ্ব বেহায়ার চাইতেও খারাপ। বিএনপি’র গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু জিয়া কোন ক্ষমতায় দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছিল ? রাতের বেলা অস্ত্র ঠেকিয়ে সে ক্ষমতা নিয়েছে। হ্যা/না ভোট করেছে, কেউ ভোটকেন্দ্রে যায়নি, রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে নিজেকে বিজয়ী করেছে। একজন সেনাপ্রধান কিভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের নির্বাচন করে। জিয়া দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। খালেদা জিয়াও ১৯৯৬ সালে ভোটার-বিহীন নির্বাচন করেছে। মির্জা ফখরুলরা যা বলে দেশের জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে।
আওয়ামী লীগের এ সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ২৫ শে জুন। এর আগে দেশের এত দুর্ঘটনা কেন। চট্টগ্রামে এত বড় ঘটনা ঘটলো কেন। এগুলো বিএনপির ষড়যন্ত্র। বিএনপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করতে পারেনি। ছাত্ররা তা প্রতিহত করেছে। ৭৫ সালের হাতিয়ার বলে যারা স্লোগান দেয় সেটাও জনগণ মেনে নেয়নি। পদ্মাসেতু নিয়ে তারা ষড়যন্ত্র করেছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মর্যাদা বিশ্বে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং শেখ হাসিনা এক অনন্য নেতৃত্ব হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন। যার কারণে তাদের এ ষড়যন্ত্র। তারা পদ্মা সেতুর আনন্দ উৎসব বিলীন করতে চায়। খালেদা জিয়া ২০১৩ সালে ওয়াশিংটনকে জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য চিঠি দিয়েছেন এবং সেই চিঠিতে পদ্মা সেতুতে টাকা না দেওয়ায় বিশ্ব ব্যাংককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি যদি দেশ প্রেমিক হন তাহলে তিনি কিভাবে এ কাজ করেন। বিএনপি দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। দেশের মানুষ বুঝে শেখ হাসিনার বিকল্প আর কিছু নেই। তাই বিএনপি জামাত ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছে বিএনপি। তারা নিজেরাই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।তাদের জন্ম হয়েছিলো গণতন্ত্রকে হত্যার মাধ্যমে।এখন তারা গণতন্ত্রের কথা বললে মানুষ ভাবে তামাশা করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপি সমালোচনা করে।বিশ্বের অন্যদেশে খবর নিলেই দেখবেন সব কিছুর দাম কি পরিমান বেড়েছে। আজ বিশ্বে সব দেশে যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে তুলনায় আমাদের দেশে-অনেক কমই বেড়েছে।আজ যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো তারা সর্বক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি মূল্য বৃদ্ধি করতো। দেশকে শ্রীলঙ্কা বানাতো অনেক আগেই। আমাদের কিছু জায়গায় ব্যর্থতা রয়েছে।তবে শেখ হাসিনার দেখভালের কারণে দেশের মানুষ তুলনামূলক অনেক ভালো আছে।