দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে দলটির, প্রায় দুই যুগ পর যে দলটির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।
প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।”
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল- ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
“আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।”
আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসা¤প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসনে নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনকে। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কিন্তু, দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।
এরপর দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকারে ফেরে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
দল গঠনের শুরুর সময়ের সব নেতাকে স্মরণ করে এক বাণীতে তিনি বলেন, “আমি স্মরণ করছি, জাতীয় চার নেতাসহ আমাদের পূর্বসূরী নেতা-কর্মীদের, যাদের অক্লান্ত শ্রম, মেধা ও ত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ আজ গণমানুষের এক বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে।”
“বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ এবং শুভ অর্জনে আওয়ামী লীগের জনগণের সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে,” অঙ্গীকার করেছেন শেখ হাসিনা।
দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সূর্যোদয়ের ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা তোলার মধ্যদিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর ওই স্থানে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং পায়রা ও বেলুন ওড়ানো হয়।
বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করার জন্য দলের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।