ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, “মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার দিন বেশি দূরে নয়। এবার জাতীয় পার্টি নম্বর ওয়ান পার্টি হবে। এমন দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। এখন সেই দিনটি এসে গেছে।”
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টির জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের যৌথ সভায় তিনি একথা বলেন।
দলের নেতাদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, “২১ বছর চোখের পানি ফেলেছি, আর নয়। তোমাদের সে পানি মুছে দিতে হবে। আমি অনেক দিয়েছি। এবার তোমাদের দেয়ার পালা।”
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দিনব্যাপী সভার শুরুতে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেন, “একটি দল নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেবে। সেখানে একটি দল আসুক না আসুক তা কোনো বিষয় নয়।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। জেলে থেকেও আমরা নির্বাচন করেছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে আমরা এককভাবে অংশ নেবো। কোনো জোটে থেকে নির্বাচন করবো না।”
“দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। আগামীতে কী হবে, তা কেউ বলতে পারে না। নির্বাচন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে”, বলেন এরশাদ।
‘দুই দলের হাত থেকে মানুষ বাঁচতে চায়’ উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা সচল ছিলাম না, সজীব ছিলাম না। তাই এতো দিন একক নির্বাচন করতে পারিনি। জাতীয় পার্টির এখন তৃতীয় শক্তি হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগন কী বলে, তোমরা কী চাও- সেটি স্পষ্ট জানাবে তিন মিনিটে। কোনো কিছু গোপন রাখা যাবে না। মতামত জানতেই তোমাদের ডেকেছি। তোমরা কী চাও, সেটি বলতে হবে। তোমরা চাওয়া মাত্রই পথ বেছে নেব।”
চেয়ারম্যানের এমন নির্দেশনার পর সভায় জাপার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আবদুর রশীদ এরশাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন “স্যার, আপনার কথায় আস্থা রাখতে পারি না। সকালে এক কথা, আবার বিকেলে আরেক কথা বলেন। একা নির্বাচন করতে চাইলে এখনই মহাজোট তাগ করুন।”
সোনাইমুড়ি উপজেলা সভাপতি হারুনুর রশিদ বাশার বলেন, “জোটে থাকা মানে বিষাক্ত সাপের সঙ্গে গর্তে বসবাস করা। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। মানুষ এখন এরশাদকেই চায়।”
সভায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের একটাই কথা ছিল, জাতীয় পার্টিকে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া মন্ত্রিসভা থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে তাড়াতাড়ি পদতাগ করার পরামর্শও দেন তারা।
সবার বক্তব্য শেষে বিকেলে এরশাদ বলেন, “তোমাদের প্রতি এবার আমার মেসেজ হলো, মানুষের ঘরে ঘরে যাও। পার্টির জন্য কাজ করো। আর একলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নাও।”
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।