প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘২০০৫ সালে তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ ৩০টি সিটও পাবে না। আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলীয় নেত্রীও হতে পারব না। কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনে তার উল্টো হয়েছে। তারাই ২৯টি আসন পেয়েছে। এবার আবারও বলছে, আওয়ামী লীগ নাকি ১০টির বেশি সিট পাবে না। জানি না এটা তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়ে যায় কিনা।’’
শনিবার দলের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশ যাতে আর জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও দুর্নীতিবাজদের না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যাতে আর জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও দুর্নীতিবাজদের দেশ না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’’
প্রধানমন্ত্রী পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে তো আমিই কথা বলেছি। তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়েছি। কিন্তু তারা কার কথায় রাস্তায় নামছে? যে কারখানায় তাদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা হচ্ছে, সেই কারখানা ভাংচুর করছে। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামে ফিরে যেতে হবে এটা কি তারা জানে না? এটা কি ঠিক হচ্ছে?’’
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, জনগণই ক্ষমতার মালিক। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’’
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতির মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক রাহাত খান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
আওয়ামী লীগ ও জোট শরিক নেতারা যা বললেন
আলোচনায় ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া অন্যকেউ দেশকে কিছু দিতে পারেননি। অন্যরা ক্ষমতায় এসে লুটেপুটে চলে গেছে। নৌকা ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই।’’
আমির হোসেন আমু ‘আওয়ামী লীগের ৬৩ বছরের সংগ্রামের ইতিহাস’ তুলে ধরে বলেন, ‘‘নানা ষড়যন্ত্র চলছে, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গত ৬৩ বছরে দেশের যত অর্জন তা সবই দিয়েছে আওয়ামী লীগ, অন্য কেউ নন। দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’’
প্রবীণ সাংবাদিক রাহাত খান বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর মতো এতো বড় সংগঠক সত্যিই বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। দেশকে মুক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করতে বঙ্গবন্ধু দেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে যাননি।’’
জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের শত অর্জনের মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে দেশ ও জনগণের জন্য নেতাকর্মীদের মহান আত্মত্যাগের ইতিহাস। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও উদারতান্ত্রিক দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যে কোন অসাংবিধানিক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হবে।’’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কোন জায়গা নেই। খালেদা জিয়া পাকিস্তান ও আফগানিস্তান মার্কা রাজনীতি করেন। হয় খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধীদের ত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় একদিন তার নিজেকেই রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘‘বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা বঙ্গবন্ধু ও তার হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ দিয়েছেন, আর মহাজোটের নেত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্র অর্জন করেছেন। মহাজোটের ঐক্য অটুট থাকবে বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি।’’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘লাখো মায়ের অশ্রুধারা ও রক্তধারার অনুভূতির নাম আওয়ামী লীগ। ভাষার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ যত রক্ত দিয়েছে পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক দলেই এমন নজির নেই।’’
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্রসফায়ার ও অপারেশন ক্লিনহার্টের সংস্কৃতি চালু করেছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের ৬৩ বছরের পথ চলায় ৩২ বছরই নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। আর এই ৩২ বছরে তিনি (শেখ হাসিনা) দেশকে সামরিক ও স্বৈরশাসন, জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা উপহার দিয়েছেন। আগামীতেও বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে শেখ হাসিনাকে আরও ৩২ বছর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে হবে।’’
মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগকে ‘একটি সুখী পরিবার; আখ্যা করে বলেন, ‘‘দুঃশাসন, অসাংবিধানিক শক্তি, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র সিপাহসালার হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বিশাল অর্জন ধরে রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে কোন বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক বা নেতৃত্বের কোন ভুলে তা হারিয়ে না যায়।’’