সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অভিযোগ ওঠেছে-ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে কেউ কেউ রহস্যজনক ভূমিকায় নেমেছেন। অতি উৎসাহী হয়ে বক্তব্য দেয়া এবং মারামারিতে নেমে পড়া দুটো ঘটনাই মাহফুজুর রহমানকে রক্ষা করার চেষ্টা কি-না সেই প্রশ্নও ওঠেছে।
মানববন্ধন শুরুর আগে মাইকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের এক নেতা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। ওই সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নেতারা প্রেস ক্লাবের ভেতরে বৈঠক করছিলেন।
ডিইউজের ওই নেতা মাইক থেকেই যা-তা ভাষায় বক্তৃতা করেন, এটি অনেকেই জানেন। তিনি তার বক্তৃতায় মাহফুজুর রহমানকে খুনি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ বন্ধের দাবি জানান। তিনি এটিএন কার্যালয় ঘেরাওয়েরও আহবান জানান। তার বক্তৃতা ছিল অনেকটা কর্মসূচি ঘোষণার মতো। বিষয়টি উপস্থিত মাহফুজুর রহমানের দুই চ্যানেলের সংবাদকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং তারা ওই নেতার ওপর চড়াও হয়। তাদের অভিযোগ ওই ব্যক্তি কেন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তিনি কর্মসূচি ঘোষণা করার কে?
কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, তাই বলে কি তারা তার ওপর চড়াও হবেন? তাকে মারধর করবেন? এই বিচারটি তারা সিনিয়র নেতাদের দিতে পারতেন। এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের নেতারা যেভাবে চড়াও হয়েছেন তাকে উপস্থিত একজন সাংবাদিক ‘মাস্তানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ছবি দেখেও তাই মনে হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে, এই সাংবাদিকরা কার পক্ষে, রুনির নাকি মাহফুজুর রহমানের?
প্রশ্ন ওঠেছে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। তারা কেন প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছেন? আজ যে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে তাতে লাভ কার? নিশ্চয় মাহফুজুর রহমানের। আর লাভ হয়েছে খুনিদের। সাগর-রুনি বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের খবরটির চেয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাটির খবরই গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। এখন নিউজটি কাভার করতে গিয়ে মিডিয়ার বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে তারা অবস্থান নিয়ে নিয়েছেন।
তবে এটিএন বাংলার সাংবাদিকরা যে আচরণ করেছেন তা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তারা রীতিমতো অন্যায় করেছেন। প্রেস ক্লাব চত্বরে তারা যে আচরণ করেছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, গোটা বিষয়টি পরিকল্পিত। জানা যায়, এটিএন বাংলা থেকে ৩০ জন সংবাদকর্মী এসেছিলেন, যাদের বেশিরভাগই সিনিয়র।
উপস্থিত একজন সংবাদকর্মী বললেন, তারা যেভাবে চড়াও হয়েছেন, তাতে মনে হয়নি- তারা সাংবাদিক। তাদের এই আচরণ গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য চরম লজ্জাকর। সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংবাদিকদের সম্পর্কে খারাপ ধারণার জন্ম হবে। বিশেষ করে টেলিভিশনের ছবি দেখে নেতিবাচক ধারণা জন্ম হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
প্রশ্ন ওঠেছে, এটিএনের ওই সংবাদকর্মীরা এতো সাহস পেলেন কোথায়? এদের অনেকেই নিজেদের ‘স্টার সাংবাদিক’ মনে করেন। ‘স্টার’দের আচরণ যদি এমন হয়, তাহলে সাংবাদিকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা নেতিবাচক হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকদের অবস্থা এখন এমনিতেই নাজুক। সাধারণ মানুষ প্রান্তিক মন্তব্য করে বলেন, “সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছু হয় না।” এটিএন সাংবাদিকরা এ ধরনের আচরণের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ঐক্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছেন কিনা সেই প্রশ্নও ওঠেছে।
তাদের এই আচরণের বিষয়ে সাংবাদিক নেতারা কঠোর অবস্থান নেবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সংবাদকর্মীরা।
ইতিমধ্যে নেতাদের কথাতেও একই মনোভাব ফুটে ওঠেছে। তারা বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেননি।
এটা সবাই জানেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। মাহফুজুর রহমানের অশ্লীল বক্তব্য গোটা বিষয়টিতে নতুন করে বারুদ সরবরাহ করেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। গণমাধ্যমকর্মীদের দাবি, এই ইস্যুতে সাংবাদিক সংগঠনগুলো যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এই ঐক্য ভাঙতে ভেতরে ও বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র যে হতে পারে-তা নেতাদের স্মরণ রাখতে হবে-এই দাবি গণমাধ্যমকর্মীদের। তা না হলে গোটা বিষয়টি প্রতিপক্ষের অনুকূলে যেতে পারে। কথায় বলে, পঁচা শামুকে পা কাটে।