কায়রো, ২৪ জুন: মিসরে একনায়ক মুবারকের নেতৃত্বাধীন এনএলডি দলের দীর্ঘ তিন দশকের স্বৈরতন্ত্র গত বছরের গণবিপ্লবে পতিত হবার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি’কে বিজয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে রোববার আল-জাজিরা টিভি বাংলাদেশ সময় রাত আটটা ত্রিশ মিনিটে (কায়রো সময়, বিকাল ৪টা ) এ ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করে।
মুরসি’কে দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আখ্যা করে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, এ নির্বাচনই ছিল মিসরের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যার ফলাফল আগেই ভোটারদের কাছে জানা ছিল না।
মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত রাজনৈতিক দল ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পাটির প্রার্থী মুরসি মোট ভোটের ৫১.৭ শতাংশ পেয়ে মুবারকের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও এনএলডি সমর্থিত প্রার্থী জেনারেল অব. আহমেদ শফিককে হারালেন। মোট দুই কোটি ষাট লাখ ভোটের মধ্যে এক কোটি বত্রিশ লাখ ভোট পেয়েছেন বিপ্লবীদের সমর্থিত এই প্রার্থী। অনিয়মের অভিযোগে আট লাখেরও বেশি ব্যালট বাতিল করা হয়েছে।
প্রথম দফার ভোটে এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি ও জেনারেল শফিক প্রতিযোগিতা করেন গত ১৬ ও ১৭ জুন অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোটে। তবে প্রথম দফার নির্বাচনে শীর্ষ দুইয়ের মধ্যে আসতে না পারা ইসলামপন্থি অপর প্রার্থী ফতুহ, বামপন্থি প্রার্থী সাবাহি, সেকুলার প্রার্থী মুসা’র সমর্থকরা- যারা গত বছরের সফল গণবিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই দ্বিতীয় দফার ভোটে ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রার্থী মুরসিকে ভোট দেননি।
মোট ভোটারের মাত্র ৫১ শতাংশ ভোটার- দুই কোটি চৌষট্টি লাখ বিশ হাজার সাতশ বাষট্টি জন ভোট দিয়েছেন। যার মধ্যে আট লাখ তিষট্টি হাজার দুইশ বায়ান্নটি ভোট অনিয়মের অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে। মোট বৈধ ভোটের এক কোটি বত্রিশ লাখ ত্রিশ হাজার একশ একত্রিশ অর্থাৎ ৫১.৭ ভাগ পেয়ে জয়ী হলেন মুরসি। পরাজিত প্রার্থী শফিক পেয়েছেন এক কোটি তেইশ লাখ সাত চল্লিশ হাজার তিনশ আশি ভোট।
প্রসঙ্গত, ফলাফল ঘোষণা হবার আগে শনিবার স্বৈরতন্ত্র বিরোধী অন্যান্য ইসলামি, বাম ও সেকুলার দলগুলোর সঙ্গে নতুন ঐক্যপ্রক্রিয়ার সূচনা করে মুসলিম ব্রাদারহুড। দীর্ঘ বৈঠক শেষে একটি যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়, যেখানে দেখা যায় নানা রাজনৈতিক আদর্শের দলগুলো ব্যক্তি ও নাগরিক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নির্বাহী প্রশাসনের সর্বোচ্চ অসামরিকীকরণসহ বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য ঘোষণা করেছে দলগুলো।
অবশ্য দেশটির রাষ্ট্রীয় দৈনিক আল-আহরাম রোববার দুপুরেই তাদের ইংরেজি ওয়েবসাইটে এক সংবাদ বিশ্লেষণে জানিয়েছে নির্বাচনের আগে যেই সাংবিধানিক ডিক্রি জারি করেছে দেশটির ক্ষমতা হস্তান্তরের দায়িত্ব নেয়া সামরিক জান্তা, তাতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে কার্যত রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা নেই।
ক্ষমতাসীন সেনা পরিষদ নির্বাচনের এ ফল ঘোষণার আগেই বিপ্লব পরবর্তী প্রথম নির্বাচিত সংসদ ও সাংবিধানিক পরিষদকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে সর্বোচ্চ আদালত। মুবারক আমলের মতই সরকারের আনুগত্যেই এমন আদেশ এসেছে বলে নাগরিকদের অভিযোগ আদালতের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত সংসদ ও সাংবিধানিক পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ছিল মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস দলের।