পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে ‘সম্ভাব্য দুর্নীতির আশঙ্কা’ তদন্তে বিশ্বব্যাংকের চাওয়া ‘সহযোগিতা’ কে অসম্মানজনক হিসেবে আখ্যা করেছে বাংলাদেশ সরকার। রোববার এ বিষয়ে সরকারের দেয়া প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘অসম্মানজনক’ হওয়ায় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য’ বিশ্বব্যাংকের চাওয়া সহযোগিতা করা যায়নি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের ‘শীর্ষ পর্যায়ে’র দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে না জানিয়ে ২৯০ কোটি ডলারের প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক তাদের ১২০ কোটি ডলার অর্থায়ন চুক্তি গত শনিবার বাতিল ঘোষণা করার পর রোববার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানালো বাংলাদেশ সরকার। সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে ‘সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে’ একটি লিখিত বিবৃতি পাঠ করে শোনান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
বিশ্বব্যাংককে ‘বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতীম সংস্থা’ আখ্যা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘বিশ্বব্যাংক এই বিষয়ে ঢাকায় আলোচনার নিমিত্তে আর একটি দলকে ২৩ জুনে প্রেরণ করে। এই দলের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের আবারও স্বতন্ত্র বৈঠক হয়। বিশ্বব্যাংক এই সময়ে আমাদের কাছে তিনটি বিষয় নিয়ে সমঝোতা চান। তারা বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি ‘সমঝোতা স্মারক’ দাবি করেন। তারা আরো দাবি করেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজের বিষয়ে বিদেশি উপদেষ্টাদের সঙ্গে একটি একটি ‘তদন্তের বিষয়াবলী’ (টার্মস অব রেফারেন্স) আমাদের সম্মতি দিতে হবে।’’
বিশ্বব্যাংকের চাওয়া এ ‘সহযোগিতা’ না করার কারণ হিসেবে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল যে, এমনভাবে বিষয়টির সমাধান হবে যাতে (১) সম্ভাব্য দুর্নীতির জন্য আমরা অসম্মানজনক কোন সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করবো না, এবং (২) দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তারা কোনো বিদেশি প্যানেলের সঙ্গে টার্মস অফ রেফারেন্স গ্রহণ করবে না।’’
প্রসঙ্গত, ২৯০ কোটি আমেরিকান ডলারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধান সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিলে সম্পাদন করে। কিন্তু প্রকল্পে কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে।
সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে ঠিকাদার নির্ধারণে সুবিধা দিতে তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দরদাতার কাছে ঘুষ চেয়েছিল বলে গত বছরের এপ্রিলে অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘তদন্তের স্বার্থে’ সৈয়দ আবুল হোসেনের দফতর বদল করে সরকার। দুদক এ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। কিন্তু সমঝোতা স্মারক ও তদন্তের শর্তাবলী স্বাক্ষর করতে বাংলাদেশ রাজি না হওয়ায় একে অসহযোগিতা হিসেবে উল্লেখ করে ঋণচুক্তি বাতিলে শনিবার ঘোষণা দিল বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের ঘোষণার পর বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মালেশিয়ার বিনিয়োগকারীদের সাথে পদ্মা সেতু অর্থায়নে যে আলোচনা চলছে- তাতে বিশ্বব্যাংকের চেয়েও সহজ শর্তে অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে।
অবশ্য রোববারের বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংককে তাদের ‘সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার অনুরোধ’ করবে সরকার।