বার্তা ৭১ ডট কমঃ রাজধানী ঢাকা শহরের মোবাইল, ভিডিও দোকানগুলোতে স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্রদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। কারণ রাজধানীর শিশু-কিশোররা দিন দিন ঝুঁকছে অশ্লীল পর্নোগ্রাফির দিকে। স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা তার মোবাইল মেমরি কার্ড দোকানদারকে দিয়ে অশ্লীল পর্নোগ্রাফি ভরে দিতে বলেন। অনেক শিশু স্কুলে যাওয়ার নাম করে, কিংবা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে অশ্লীল ভিডিও দেখে। অনেকে আবার সেগুলো মেমোরি কার্ডে নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল ফোনে দেখে। অনেকে ইন্টারনেট সুবিধা-সম্বলিত মোবাইল সেট ব্যবহার করে সরাসরি পর্নো সাইটগুলোতে প্রবেশ করছে। সেখান থেকে ডাউনলোড করে তা বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশু, কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা, যাদের বড় একটা অংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে অভিভাবকরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, দিনে দিনে যে পরিমাণে অশ্লীল পর্নোগ্রাফি সমাজে বিভিন্ন রুপে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে সন্তানের জন্য একটু বেশিই চিন্তা করতে হচ্ছে। অল্প বয়সী ছেলেরা কিছু বুঝতে শেখার আগেই এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
রাজধানী ঢাকা শহরের যে কয়েকটি জায়গায় এ ডাউনলোড সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে তারমধ্যে ধানমি , গুলশান, বারিধারা উল্লেখযোগ্য। ধনী পরিবারের ছেলেরা বেশির ভাগ নিজেদের ঘরে বসে কম্পিউটারে কিংবা মোবাইল ফোনে এসব করছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একদিকে শিক্ষক ক্লাশ নিচ্ছেন, অন্যদিকে পিছনে বসে মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থীরা এসব দেখছে।
শহরের একটি মার্কেটের সাইবার ক্যাফেতে ব্যবহৃত কম্পিউটারের ব্রাউজিং লিস্ট (বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশের তালিকা) থেকে দেখা যায়, সাইবার ক্যাফেতে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের ৯৫-৯৭ শতাংশের বেশি পর্নোসাইটগুলো ব্রাউজ করেন।
সাইবার ক্যাফেতে বসে পর্নোসাইটে প্রবেশের প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণ এখানকার কম্পিউটারগুলো ছোট ছোট খুপড়ির মধ্যে বসানো। কম্পিউটার বুথে দরজা লাগিয়ে কিংবা দেয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বিশেষ কৌশলে এ খুপরিগুলো তৈরি করা হয়। বিকৃত মানসিকতা এবং অতি মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে এ ধরনের খুপড়ি তৈরি করে রেখেছে ক্যাফে মালিকরা। ব্যাঙের ছাতার মতো রাজধানীর আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কম্পিউটার ডাউনলোডের দোকান।
ছোট ছোট স্কুল-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভয়ঙ্কর ব্যাধিতে। সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধে।
এ ব্যাপারে ডা. সেলিম বলেন, পর্নোগ্রাফিতে আক্রান্তরা সাইকোলজি কোমায় (মানসিকতার চূড়ান্ত বিকৃতি) চলে যায়। এই পর্নোগ্রাফিতে মানসিক অসুস্থতা শুরু হয়ে এটি ব্যক্তিত্বের মধ্যে অসুস্থতা সৃষ্টি করে। ফলে, আক্রান্তরা স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক পরিম লে মিশতে পারে না, তাড়াতাড়ি লেখাপড়া ছেড়ে দেয়, কম বয়সে বিয়ে করে ফেলে।
ডা. লেলিন চোধুরী বলেন, এরা ভবিষ্যতে পরিবার গড়ে তোলার বিষয়ে যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে কিংবা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিবাহ বহির্ভূত সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ে। শহরগুলোতে ৫০ শতাংশ ছেলে-মেয়েই প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই বিবাহ বহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ে। শুধু ইন্টারনেট কিংবা মোবাইল ফোনের দুনিয়াতেই নয়, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই চলছে পর্নোগ্রাফির রমরমা বাণিজ্য।
এদিকে, বন্ধ হচ্ছে না সাইবার ক্রাইম। সাইবার-অপরাধী ও পর্নো-সন্ত্রাসীরা কৌশলে কিংবা ফাঁদে ফেলে ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে এবং মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সিডি, ভিসিডি বানিয়ে বিক্রি করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গোপন ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে। অথচ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ পাশ হওয়ার পর এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা; কিন্তু এ আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় দেদারছে আইন লঙ্ঘন করে চলছে এক শ্রেণির মুনাফালোভী। চোখের সামনে পর্নো আইনের এ রকম লঙ্ঘন হয়ে চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অজানা কারণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী চুপ করে থাকছে।
গ্রিন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি ইবনুল সাইদ রানা বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর মাধ্যমে এ সন্ত্রাস বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র থাকতে হবে। নইলে আটকের দুই/একদিনের মাথায় বেরিয়ে আসবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি পরিবার ও সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাঠ্যবইয়ে এ সর্ম্পকে সচেতন করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।