ঢাকা, ৩ জুলাই: বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং বিদ্রোহে দায়ীদের শনাক্ত করতে সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সন্দেহভাজন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা নিহত ও নির্যাতিত হয়েছেন; এমন সব সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে বুধবার ঢাকায় একটি প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সংগঠক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি মঙ্গলবার দুপুরে ফোনে বার্তা৭১ডটকমকে জানিয়েছেন, “বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগে বিস্তারিত জানানো হবে না।”
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। বাহিনীটির সারা দেশে স্থাপিত বিশেষ আদালতগুলো ওই বিদ্রোহ ও হত্যার পৃথক পৃথক মামলায় কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
বিদ্রোহে আলোচিত ১৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অভিযুক্ত ৬২১ জওয়ানের মধ্যে ৬১১ জনকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সর্বশেষ গত ২৭ জুন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে এ লক্ষ্যে স্থাপিত বিশেষ আদালত, নিরপরাধ সাব্যস্ত হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ১০ জন।
এই পুরো বিচার প্রক্রিয়াসহ সরকারের সার্বিক পদক্ষেপ নিয়ে এইচআরডব্লিউ’র নিজস্ব গবেষক দলের করা ‘ভয় আমাকে ছাড়ে না’: ২০০৯’র বিডিআর বিদ্রোহের পর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও পক্ষপাতদুষ্টু বিচার’’ শীর্ষক প্রতিবেদনটির বিস্তারিত না জানা গেলেও একটি খুবই সংক্ষিপ্ত পরিচিতিতে বলা হয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহ পরবর্তী ‘‘সরকারি পদক্ষেপের মধ্যে আইনের গুরুতর সব অপব্যাবহারের প্রামাণ্য দলিল হাজির করছে প্রতিবেদনটি।’’
সংক্ষিপ্ত পরিচিতিতে বলা হয়, ‘‘২০০৯ এর ফেব্রুয়ারি’র শেষের দিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস’র (বিডিআর) করা রক্তাক্ত বিদ্রোহে প্রকম্পিত হয় বাংলাদেশ। ঘটনার ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহ দমিত করা হয়, কিন্তু এর পরপরই সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীগুলো হাজার হাজার বিডিআর সৈনিককে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে, উদ্দেশ্য এর জন্য দায়ীদের শনাক্ত করা।’’
এইচআরডব্লিউ জানায়, ‘‘বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ার প্রতি এই সরকারি পদক্ষেপের মধ্যে আইনের গুরুতর সব অপব্যবহারের প্রামাণ্য দলিল হাজির করছে প্রতিবেদনটি। ৪০ জনের বেশি সন্দেহভাজন বিদ্রোহী হেফাজতে থাকাকালে মারা গেছে। আটককৃতদের ওপর নির্যাতন ছিল অবাধ ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে আইনের অপব্যবহারের অধিকাংশই সংঘটন করেছে বাংলাদেশের কুখ্যাত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সন্দেহভাজন বিচার করা হয়েছে গণবিচারে যা পক্ষপাতহীন বিচারের মানে পড়ে না, শতশত লোককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এমন প্রক্রিয়ায়।’’
বুধবার সকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশে উপস্থিত থাকবেন এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস এবং গবেষক তেজ থাপা।