সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে সুপিরিয়র জুডিশিয়াল কমিশন আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের পদসংখ্যা নির্ধারণ ও প্রেসিডেন্টের কাছে বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করতে এ কমিশন গঠন করা উচিত। সাত সদস্যর কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি। বিলে বিচারপতিদের রাজনৈতিক পরিচয় মুক্ত থাকার শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্য থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের জন্য দু’টি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সর্বশেষ ১০ বছরের পরিচালিত মামলার মধ্যে হতে প্রতি বছর অন্তত দু’টি মামলার রেকর্ড পর্যালোচনা ও পেশাগত আচরণ সম্পর্কিত বার কাউন্সিলের প্রতিবেদন পর্যালোচনা। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখায় বেসরকারি সদস্যের বিল হিসেবে এটা জমা দিয়েছেন। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে সমালোচনা হওয়ার পরই বিলটি জমা দেয়া হলো। ওই বিচারপতিকে নিয়ে সংসদে যে ক’জন এমপি সমালোচনায় অংশ নেন তাদের মধ্যে মুজিবুল হক চুন্নু একজন। তার প্রস্তাবিত বিলের নাম সুপিরিয়র জুডিশিয়াল কমিশন আইন-২০১২। এ নিয়ে তিনি চারটি বেসরকারি বিল জমা দিলেন। অন্যগুলো হচ্ছে- পিতা-মাতার ভরণপোষণ, হরতাল বন্ধ ও আরপিও সংশোধন সংক্রান্ত বিল। এগুলো বর্তমানে সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে। নতুন এই বিলে সুপ্রিম কোর্টের তিন ধরনের বিচারকদের নিয়োগে কমিশন কাজ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আপিল বিভাগের বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ও হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক। বিলে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগে ৫টি শর্ত দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন জাতীয় বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠনের অতীত বা বর্তমান সংশ্লিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা জীবনের সকল স্তরে ন্যূনতম ২য় বিভাগ বা সমস্তরের গ্রেডিং নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া আইন বিষয়ে অন্যূন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চাওয়া হয়েছে। এদিকে শপথ নেয়ার দিন বিচারকের বয়স অন্যূন ৫০ বছর হওয়ার শর্ত দেয়া হয়েছে। এদিকে আপিল বিভাগে বিচারক পদে নিয়োগের জন্য কমিশন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জ্যেষ্ঠতা, বিচারিক দক্ষতা, সততা ও সুনামসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিশদভাবে বিবেচনা করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে বিলে কমিশন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটা সাত সদস্য বিশিষ্ট হবে। এর চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি। ছয় সদস্যের মধ্যে থাকবেন- আপিল বিভাগের প্রবীণ বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের প্রবীণ বিচারক, স্পিকার মনোনীত একজন এমপি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি। বিলে বলা হয়েছে, এর মধ্যে কোন সদস্যের নাম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক পদে নিয়োগের জন্য কমিশনে উপস্থাপিত হলে ওই সদস্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন না। কমিশনের সাচিবিক দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়নের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে কোন আইন হয়নি। তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা ও যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা অগ্রাধিকার পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে একদিকে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের যোগ্যতা, সততা, নিরপেক্ষতা, কর্মদক্ষতা ও বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্যদিকে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা বারবার ব্যাহত হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন। এসব মামলা দু্রত নিষ্পত্তি করে জনগণকে প্রতিকার দিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক প্রয়োজন। সংবিধানে বিচারক নিয়োগের জন্য প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে কতজন বিচারক প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ করতে কোন আইনি ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। প্রেসিডেন্টকে এ বিষয়ে সময়ে সময়ে সুপারিশ করা প্রয়োজন।