ঢাকা, ৬ জুলাই: দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। দেশের টালমাটাল পুঁজিবাজার এই ঘটনায় আরো অস্থির হয়ে উঠেছে। গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। আর ওই দিন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে অস্বাভাবিক বিক্রয় চাপ আসে।
দেশের প্রধান প্রধান কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসে খোঁজ নিতে গেলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এর ফলে শেয়ারবাজারে যেসব বিদেশী বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তাদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। এ কারণে গত সোমবার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বাজারে বড় ধরনের বিক্রির চাপ আসে। ওই বিক্রির চাপ বাজার সামাল দিতে না পারায় ওই দিনই বড় ধরনের দরপতন ঘটে। যার রেশ সপ্তাহ শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
এদিকে গত সপ্তাহে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও বরাবরের মতো সেই একই চিত্র দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার বাজার ফিরে গেছে পতনের ধারায়। দরপতনের প্রতিবাদে ফের রাজপথে বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীরা।
গত প্রায় দুই বছর ধরে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করায় হতাশ হয়ে পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে গেলেন দেড় লাখ বিনিয়োগকারী। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে হয়েছে ২৫ লাখ ৪৫ হাজার।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত অর্থবছরে নবায়ন না হওয়ায় প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার বেনিফিসিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাজারের পতনের প্রায় পুরোটা সময় ধরেই মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। কিন্তু এখন তারাও হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনরত এক বিনিয়োগকারী বার্তা৭১ডটকমকে বলেন, “এখন আর আন্দোলন করতেও মন চাই না। গত দেড় বছর ধরে কত মিছিল মিটিং করলাম কোনো ফল হয়নি। ভালোতে দূরের কথা দিন দিন বাজার পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ বাজার আর বোধহয় ভালো হবে না।”
এই বিনিয়োগকারীর মতো এখন সবার মনোভাব একই। অনেকেই বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়া পথ খুঁজছে। আবার অনেকেই বাজার পরিস্থিতি একটু ভালো হলে ফের বিনিয়োগ করে হারানো পুঁজি ফেরত পাওয়ার চেষ্টায় আছে। কিন্তু ফেরত পাওয়া আর হচ্ছে না। বরং হারানো পুঁজির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমেছে ৩৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। লেনদেন হওয়া ইস্যুর মধ্যে দর বেড়ছে ১০টির, কমেছে ২৬০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে চারটি। এর আগের সপ্তাহে সাধারণ মূল্যসূচক বাড়লেও গেল সপ্তাহে সূচক ২৮২ পয়েন্ট কমে চার হাজার ২৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ২৭২ পয়েন্ট। বাজার মূলধন কমেছে তিন দশমিক ৫৩ শতাংশ।