প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া মাছ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে রপ্তানিকারকদের সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর দেশে ৩৩ হাজার কোটি টাকার মাছ আহরণ করা হয়। এ খাতে রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানিতে পোশাক খাতের পরের অবস্থানেই রয়েছে মৎস্য খাত।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মৎস্য রপ্তানি করেন বা উৎপাদন করেন তাদের কাছে আমি অনুরোধ করব, কোনো ধরনের অসাধু পন্থা অবলম্বন করবেন না। সাময়িকভাবে হয়তো কিছু পয়সা কামাই করেন, কিন্তু এরপর চিরতরে পয়সা কামাইয়ের পথটাই বন্ধ হয়ে যায়। আগামীতে আর দয়া করে এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। এটা আমার অনুরোধ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমাদের মৎস্য মন্ত্রণালয়কেও বলব এই ক্ষেত্রে নজদারী বাড়াতে যেন রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তার্জাতিক মানটা বজায় থাকে। চিংড়ি এবং অন্যান্য যে সমস্ত জলজ প্রাণী আমরা রপ্তানি করি সেদিকেও যেন যথাযথ দৃষ্টি দেয়া হয়।’
বন্যার প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত সরকার। এ নিয়ে ভীতি সৃষ্টি না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় চাষ করে বিক্রি করেছেন হাজার টন মাছ, কেউ মাছের অভয়ারণ্য আগলে রেখে বাড়িয়েছেন পোনা উৎপাদন, আবার কেউ রপ্তানি করে আয় করেছেন শত কোটি টাকা, কেউ হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান আর উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করে মাছ উৎপাদনে রেখেছেন অনন্য অবদান। তারা সবাই কৃতি মৎস্য চাষী।
এ সময় দেশের ৭০০ প্রাকৃতিক জলাশয়, ৫৮০টি অভ্যয়ারণ্যে প্রাকৃতিকভাবে মাছ সংরক্ষণে পোনা ও মা মাছ নিধন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে জেলেদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও সরকারি সহায়তায় অনিয়ম কমানো ও নতুন পাওয়া সমুদ্রসীমায় মাছ সম্পর্কিত তথ্য ও গবেষণায় নেয়া সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি।
দেশের বাজারে ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ৮০টি ডিজিটাল ইউনিট সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় সৎস্যসম্পদ রক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শুধু আমাদেরকে স্বাধীনতাই এনে দেননি—মাছেভাতে বাঙালি যেন মাছ ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থাও নিয়ে হাতে নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতেও তিনি অনেক অবদান রেখেছিলেন। মৎস্য উৎপাদনে তিনি একটা সামাজিক আন্দোলনের ডাক দেন। শুধু তাই নয়, বাঙালি যেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারেন সেই সম্ভাবনার দ্বারও তিনি উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। নিজে তিনি ১৯৭৩ সালে মৎস্য সপ্তাহ পালন করেন।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব উজ্জল বিকাশ দত্ত।