মিশরের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি গত মাসে ভেঙে দেয়া পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করে ডিক্রি জারি করার পর সেখানে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত মাসে সেনাবাহিনীর ইচ্ছানুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ভেঙে দেয়া ওই সংসদের অধিবেশন আহ্বান করে রোববার ডিক্রি জারি করেন মুরসি। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে নির্বাচনে জয়ী হন। আর ভেঙে দেয়া পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ব্রাদারহুডেরই। এ বিষয়ে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সেনাবাহিনী দফায় দফায় বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করছে বলে জানা গেছে। এদিকে মিশরের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, এই সংসদ আর কার্যকর নেই। রায়ে প্রেসিডেন্টকে তিরস্কার করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আদালত পার্লামেন্ট বাতিল করার পর একে পুনরায় চালু করার কোন অধিকার নেই প্রেসিডেন্টের। এতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের সব ধরনের রুলিং ও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এতে আপিল করারও কোন সুযোগ নেই। এটা মানতে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই বাধ্য। গতকাল এক বিশেষ বৈঠকের পরে এমন ঘোষণা দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিবিসি জানায়, মুরসির ডিক্রি জারি করার পরই রোববার জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেছে সুপ্রিম কোর্ট কাউন্সিল অব দ্য আর্মড ফোর্সেস বা স্কাফ। তবে বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় গতকাল আবারও বৈঠকে বসে তারা। গত মাসে নির্বাচনের পর ফল ঘোষণার মাত্র দু’দিন আগে এক আদেশ জারির মাধ্যমে কিছু ক্ষমতা কুক্ষিগত করে স্কাফ। একই সঙ্গে খর্ব করা হয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও। সবশেষ প্রেসিডেন্টের ডিক্রি জারি করার পর প্রেসিডেন্ট ও স্কাফের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নতুন ঘোষণা উত্তেজনাকে ত্রিমুখী করে দিয়েছে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি স্কাফ। তবে হঠাৎ করে মুরসির ডিক্রি জারি করা কেন- এ বিষয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়াকে মুরসি বা ব্রাদারহুড কেউই কিন্তু স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। ফলে তিনি এখন তার ক্ষমতা দেখাতে চাইছেন। তবে মঙ্গলবার (আজ) পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করেছেন মুরসি। এখন সেই অধিবেশন বসে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, গত মাসে আদালত পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার পর সেটি ঘিরে রেখেছিল সামরিক বাহিনী। এমপিরা ঢুকতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়েছিল। তবে মুরসির ডিক্রি জারি করার পর সেখানে ঢুকতে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়নি। আকস্মিকভাবে সেনাদেরও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পার্লামেন্ট স্পিকার সাদ আল কাত্তানি অধিবেশন আহ্বান করেছেন। উদারপন্থি দলের এমপিরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের আদেশ সংবিধান বিরোধী নয়- এটি নিশ্চিত হলে তারা যোগদান করবেন। কিন্তু ব্রাদারহুড ও সালাফিস্ট দলের এমপিরা পার্লামেন্টে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এখন দেখার বিষয় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক কোন সমঝোতা হয় কিনা। অন্য একটা সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে। তা হলো- সংক্ষিপ্ত অধিবেশনের পর প্রেসিডেন্ট নিজেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারেন।