সারা বছর ঘুরে আসে একটি পবিত্র মাস। মাহে রমজান। হঠাৎ করেই বছরের চিরাচরিত অভ্যাসগুলো সব পাল্টে যায়। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটি আসে, তা হলো খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। সিয়াম সাধনার এ মাসে আত্মশুদ্ধির দরজা খুলে যায়। শারীরিক, মানসিক কিংবা আধ্যাত্মিক উত্তরণের মাস এটি। পবিত্র এ মাসটি কিভাবে কাটাবেন, সে সম্পর্কে রয়েছে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ:
(১) পবিত্র রমজান মাসের আগে প্রত্যেক মুসলমানের একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ নেয়া উচিত।
(২) আপনি যদি স্বাভাবিক বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও এ মাসে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। আর সে জন্য নিজের খাদ্যের একটি তালিকা ও পরিকল্পনা করে নিন। খাবার তালিকায় অবশ্যই পুষ্টির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া সবচেয়ে জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান ও বিশ্রাম নেয়ার দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে।
(৩) ভোরে ফজরের আজানের কিছু আগে উঠে সেহ্রি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটাই সঠিক অভ্যাস। এ সময়ে সেহ্রি খাওয়ার ফলে ফজরের নামাজটাও পড়া হয়ে যাবে। সেহ্রি খাওয়া সুন্নাত। দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবারও এটি। তাই অতিরিক্ত খাবেন না। পরিমিত খাদ্যের একটি তালিকা অনুসরণ করতে পারলে সবচেয়ে ভাল হবে। শর্করা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, আঁশ জাতীয় সবজি, ফল খান ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ, এ জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে হজম হয় ও সারাদিন সতেজ থাকতে সহায়তা করে।
(৪) দিনের সবচেয়ে গরম সময়টিতে শীতল স্থানে থাকার চেষ্টা করুন। হতে পারে অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়ি। শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন। সম্ভব হলে, নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রাম নিন।
(৫) রমজানের সময় আরেকটি বিষয় বেশ লক্ষণীয়। সারা দিন রোজা রাখার ফলে শরীর পরিশ্রান্ত এবং পরিশুদ্ধও হয়। ফলে ছোটখাটো রোগব্যাধি থাকলে, তা সেরে যায়। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এ সময়। কিন্তু আমাদের দেশে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় অনেকেই পেট পুরে খেতে পছন্দ করেন। আর এ সময় মেন্যুতে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবারই বেশি থাকে। বরং সুন্নাত তরিকা অনুযায়ী মাগরিবের আজানের পর রোজা ভেঙে কয়েকটি খেজুর খাওয়া উত্তম। এর সঙ্গে দুধ, পানি, স্যুপ বা ফলের জুস খাবেন। কারণ সারাদিন অভুক্ত থাকার পর শরীরে তরলের চাহিদা সৃষ্টি হয় ও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণও কিছুটা কমে যায়। মাগরিবের পর স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম খাবার পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। অতিরিক্ত খাবেন না।
(৬) সন্ধ্যার দিকে ক্যাফেইন জাতীয় কোন পানীয় অর্থাৎ চা, কফি বা সোডা জাতীয় পানীয় বা কোল্ড ড্রিংস যেমন কোক, পেপসি ইত্যাদি পান করবেন না। বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে গেলে, সেখানে বেশি করে পানি পান করুন।
(৭) ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেশি করে পানি পানের অভ্যাস করুন।
(৮) রোজার সময় হালকা ব্যায়াম বেশ উপকারী। প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে নিয়মিত ১৫-২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।
(৯) ভাজা-পোড়া বা ঝাল জাতীয় খাবার পরিহার করুন। কারণ, এ জাতীয় খাবার বুকে জ্বালাপোড়া, বদহজম ও গ্যাসের সৃষ্টি করে।
(১০) চিকিৎসকের কাছে মাল্টি-ভিটামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ নিতে পারেন। তবে সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করলে, অতিরিক্ত ভিটামিনের কোন প্রয়োজন হবে না।
(১১) দিনে কয়েক বার নির্দিষ্ট সময় ব্রাশ ও দাঁতে ফ্লস ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোন খাদ্যকণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকলে, তা বের হয়ে যাবে ও মাড়িকে সুস্থ-সবল রাখবে।
(১২) নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। কারও সর্দি-কাশি বা হাঁচি হলে সাবধান থাকুন। কারণ, এর মাধ্যমে আপনার শরীরে ভাইরাস জ্বর বা এ জাতীয় কোন রোগের জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে।
(১৩) ধূমপানের বদভ্যাস থাকলে, তা ত্যাগ করুন।
(১৪) পর্যাপ্ত ঘুমের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে।
(১৫) বাড়িতে মেহমান এলে, তাদের সামনে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বা ফলমূল পরিবেশন করুন। তরলজাতীয় খাবার যেমন শরবত, জুস ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিতে পারেন।