মুসলিম আইনানুযায়ী সম্পত্তি হস্তান্তরের কয়েকটি উপায় রয়েছে। উইল তাদের মধ্যে অন্যতম। মুসলিম আইনে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উইলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মুসলিম আইনের অন্যান্য বিষয়ের মতো উইলের উৎসও কোরান ও হাদিস। কোরান ও হাদিসের বিভিন্ন রেফারেন্স থেকেই উইল বিষয়ক আইনের সূচনা ও বিকাশ।
কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কি রুপে ব্যবহৃত বা বন্টিত হবে সে তার মৃত্যুর পূর্বেই তা স্থির করে যেতে পারে। মৃত্যুর পূর্বে এভাবে সম্পত্তি বন্টনের পদ্ধতিকে উইল বলা হয়। কোন সম্পত্তি মৃত্যুর পর কিভাবে পরিচালিত হবে বা কে কতটুকু প্রাপ্ত হবে সেমর্মে তার অভিপ্রায়ের আইনগত ঘোষণাই হলো উইল।
যিনি উইল করেন তাকে উইল দাতা ও যার বরাবরে উইল করা হয় তাকে উইল গ্রহিতা বলা হয়ে থাকে। সাধারণত উইল দাতার মৃত্যুর মুহুর্ত হতেই উইল কার্যকর হয়ে থাকে। উইল সম্পাদনের সময় ও উইলদাতার মৃত্যুর সময়ে উইল গ্রহিতার অবশ্যই জীবিত থাকতে হবে। এসময়ে উইল গ্রহিতা জীবিত না থাকলে উইল কার্যকর হবে।
উইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – উত্তরাধিকারী যেন বঞ্চিত না হয়। উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে কোন উইল করা যাবেনা। উইলকারী তার জীবিত কাল পর্যন্ত উইলসম্পত্তিতে তার স্বার্থ অক্ষুণœ রাখতে পারে।
নাবালকের উইল বৈধ নয়। তবে উইলকারী সাবালক হয়ে তার উইল স্বীকার করে নিলেই তা বৈধ হয়ে যাবে। একইভাবে মাতাল বা অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় কোন উইল সম্পাদিত হয়ে থাকলে পরে উক্ত ব্যক্তি সুস্থ হলেও সে উইল বৈধ হয় না। বিষ প্রয়োগে বা অন্য উপায়ে আত্মহত্যা করলে তার দ্বারা কৃত উইল বৈধ হবে না।
কোন উত্তরাধিকারীকে উইল করা বৈধ নয়-যদি উইলকারীর মৃত্যুর পর তার অন্যান্য ওয়ারিশ উক্ত বিষয়ে সম্মতি না দেয়। কোন একজন ওয়ারিশ সম্মতি দান করলে শুধু তার অংশই উইলের আওতায় আসবে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি উইল করা যায়না। তবে উত্তরাধিকারীগণ সম্মত হলে এক-তৃতীয়াংশের বেশিও উইল করা যাবে এবং অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ সহমত হলে উত্তরাধিকারীর অনুকুলেও কৃত উইল বৈধ। উইলকারীর কোন উত্তরাধিকারী না থাকলে তিনি তার সমুদয় সম্পতিই উইল করে দিতে পারেন। এব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ নেই।
সুস্থ ও সাবালক এরূপ প্রত্যেক মুসলমান উইলের মাধ্যমে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। উইলকারীর উচিৎ আইন জেনে ও বুঝে কাউকে বঞ্চিত না করে ন্যায়ানুগ নীতিতে উইল করা। প্রয়োজনে আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।