বাজেটে অঘোষিত আয়:: যতবারই বাজেটের সময় আসে, কালো টাকা সাদা করার পক্ষে-বিপক্ষে নানা মুনির নানা মত প্রকাশিত হতে থাকে। আলোচনা, সমালোচনার ভয়ে সরকারও ন যুজু ন তন্তু অবস্থায় থাকে। এ পর্যন্ত কোন সরকারই এ সম্পর্কে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে সাহস করেনি। যার ফলশ্র“তিতে সেই অঘোষিত টাকা বিনিয়োগ তো নয়ই, কোন ব্যাংকেও আসছে না। সুযোগ পেলেই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশে কালো হোক, কী সাদা হোক, এই টাকা বিনিয়োগ হলে দেশের কী ক্ষতি? ন্যায়-নীতির প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন বিধায় ন্যায়ের দিকে চেয়ে না থেকে, নীতিকে আঁকড়ে না থেকে, বাস্তবতার নিরিখে যা প্রয়োজন, যা দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে, তা গ্রহণ করা কি অনুচিত?
আমাদের দেশে যারা কালো টাকা সাদা করার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন, তারা কারা? এদের দেশ চালাতে দিলে তারা পারবেন কি? টেলিভিশনে বড় বড় কথা বলে, টক শো করে বাহবা কুড়ানো যায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা বড় বড় কথা বলছেন, বড় বড় থিসিস নিয়ে হাজির হচ্ছেন, একটা গরিব মানুষের উপকার তারা করেছেন এমন নজির নেই।
বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট চলছে। আমার বিশ্বাস, তারল্য সংকট কেটে যেত যদি মানি লন্ডারিং আইন অভ্যন্তরীণ লেনদেনে শিথিল করা হতো। বিদেশে পাচার হলে, ওই আইনটি প্রয়োগ করে দেশের মধ্যে যে কোন অংকের টাকা লেনদেন করলে, উৎস সম্পর্কে খোঁজখবর না নিলে, অনেক অলস টাকা ব্যাংকে ফেরত আসত।
ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন শত কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। ঘুষ হারাম, ঘুষ অনৈতিক জেনেও অনেকেই ঘুষ খায়। ঘুষ তো কেউ বন্ধ করতে পারেনি। এমনকি মানি লন্ডারিং আইনও পারেনি। এখন হচ্ছেটা কী? ওই ঘুষের টাকা বড় নোটের আকারে বা ডলারে অথবা স্বর্ণের পিণ্ডে আবদ্ধ হয়ে চলে যাচ্ছে গুপ্তস্থানে। ফলে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। যারা টক শো করেন, বড় বড় কথা বলেন, তাদের দ্বারা ঘুষখোরের হৃদয়ে কোন রকমের রহমত এখনও পয়দা হয়নি।
আগামী বাজেটে আমার পরিষ্কার প্রস্তাব হল, যারা আগামী ১০ বছর নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করবেন, তাদের টাকার উৎস সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। আমার প্রস্তাব গ্রহণ করলে আমি বিশ্বাস করি, দেশে-বিদেশে যারা টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন, তাদের অন্তত কিছু অংশ বিনিয়োগে আসবে। বেকার সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের তারল্য সংকটও কেটে উঠবে। অর্থনীতিতে সবসময় হার্ডলাইনে না থেকে নমনীয় হলে ফলাফল ভালো পাওয়া যায়।
শুল্কনীতি একটি দেশের জন্য দু’রকম হতে পারে না। চট্টগ্রামে লোকাল এলসি’র ওপর ভ্যাট, বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়ে চেম্বারসও আপত্তি জানিয়েছে।
বিনিয়োগে যত কৌশল আছে, সরকারকে গ্রহণ করতেই হবে। নীতি-নৈতিকতা নয়, বাস্তবতার নিরিখে বিচার করা এবং বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা এ মুহূর্তে দেশের জন্য বড় প্রয়োজন।
আমেরিকার মতো দেশেও কালো টাকা আছে। কালো টাকা নেই এ রকম দেশ পৃথিবীতে নেই।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক