প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই বিদেশী ঋণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের সেই সময়ে লুটপাট ও দুর্নীতির বদনাম এখন দেশবাসীকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’
গতকাল আওয়ামী যুবলীগের ষষ্ঠ কংগ্রেসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন মানুষের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসে। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে একজন থাকেন অশান্তিতে। তিনি কে তা দেশের মানুষ জানে। অশান্তির আগুনে দেশকে পুড়িয়ে ছারখার করার চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক এটা তারা চায় না। এ জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক কষ্টে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। বারবার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করতে না পারে, নতুন করে খেলায় মাততে না পারে, সেজন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও গ্রামগঞ্জে যুবলীগের নেতাকর্মীদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো সতর্ক থাকতে হবে।
দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পতাকা, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ণিল আয়োজনে সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে অনুষ্ঠিত হয় দুই পর্বের কংগ্রেস অনুষ্ঠান। সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি অংশ নেন কংগ্রেসে। বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে। দেশের মানুষ যা পেয়েছে, তা আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ফসল হিসেবে পেয়েছে। অন্যদিকে দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেন, তার ছেলেরা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে, অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেন। তাদের দিয়ে দেশের মানুষ কি আশা করবে?
প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, যুবলীগ সেই আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থেকেছে। নিজে কি পেলাম, না পেলাম তা না ভেবে মানুষকে কি দিতে পারলাম সে চিন্তা করতে হবে। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ত্যাগকে অনুসরণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা, দলীয় সংসদ সদস্যসহ চীন, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ভারত ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের বিদায়ী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আমির হোসেন আমু তার বক্তব্যে যুবলীগের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুরু থেকেই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুবলীগ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যুবলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য রাখতে হবে এই সংগঠনে যাতে কোন চাঁদাবাজ ও মতলববাজের স্থান না হয়। কোন সন্ত্রাসী যাতে এই সংগঠনে স্থান না পায়।
শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে যুবলীগের বিদায়ী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী পুরনো নেতৃত্বের পরিবর্তে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, পারস্পরিক দোষারোপ নয়, আত্মসমালোচনার রাজনীতি আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বাইরের কোন শক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, তারা চিহ্নিত। ক্ষতি করতে পারে ভেতরের শক্তিই।
বিকালে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, কোষাধ্যক্ষের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন ও অনুমোদিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় পরিষদসহ সারাদেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা ও ৫৭৮টি সাংগঠনিক উপজেলা থেকে ২ হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর-ডেলিগেটসসহ প্রায় ৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দেন।