নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সরকার ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিল’ গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা স্বেচ্ছায় তাদের এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে এই তহবিলে দান করবেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক মাসের বেতন দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ‘আর্থিক সঙ্গতির’ বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রতি মাসে এক দিনের বেতন গ্রহণের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দিষ্ট দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সব নাগরিক এই তহবিলে অর্থ দানের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেও আগ্রহীদের কাছ থেকে সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করবেন। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার
পদ্মা সেতু নির্মাণে আগ্রহী অর্থদাতাদের সুবিধার্থে দুটি আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে একটি স্থানীয় মুদ্রা এবং আরেকটি হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সিলেটের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠানটুলী স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২৫ হাজার টাকার একটি চেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চাইলে অর্থ গ্রহণের পদ্ধতি নির্ধারণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, এভাবে চেক দিলে হবে না, অর্থ গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট রূপরেখা অনুসরণ করতে হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী সমকালকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলের অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে রূপরেখা তৈরি করার জন্য অর্থ বিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা উপস্থাপন করবেন অর্থ সচিব। প্রস্তাবিত রূপরেখা দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ সহায়তা দিতে আগ্রহী স্থানীয় জনসাধারণ স্থানীয় মুদ্রা অ্যাকাউন্টে এবং প্রবাসীরা বিদেশি মুদ্রা অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা দিতে পারবেন।
অর্থাৎ স্থানীয় কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক তার ইচ্ছামতো অর্থ পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে অর্থ সহায়তা হিসেবে জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জনগণের দেওয়া অর্থ ব্যবহারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত রূপরেখায় সব ধরনের রক্ষাকবচ থাকবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দুটি পরিচালনার পদ্ধতি ও নীতিমালাও থাকবে ওই রূপরেখায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তিনি তার টেলিফোনে সরাসরি কথা বলে সাধারণ মানুষের আগ্রহের প্রসঙ্গ মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছেন। জনগণের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ এবং এ পর্যন্ত যারা স্বেচ্ছায় অর্থ দিয়েছেন কিংবা আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, এ সরকারের আমলেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য ঋণচুক্তি করলেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করতেই পারে। কিন্তু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নিজেদের সরিয়ে নেওয়াটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্বব্যাংকের অনেক প্রকল্প রয়েছে বাংলাদেশে। এসব প্রকল্পের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। তাই তিনি অহেতুক বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিতর্কে না জড়ানোর জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।