এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে জিপিএ ৫ পেয়ে ছেলেরা ও পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে। ১০টি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৭ ভাগ। গত বছর জিপিএ ৫ ও পাসের হার দুটোতেই ছেলেরা এগিয়ে ছিল। ১০টি বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬১ হাজার ১৬২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ১৬৮ জন ছেলে এবং ২৭ হাজার ৯৯৪ জন মেয়ে। ছেলেদের জিপিএ-৫ এর হার ৮ দশমিক ৬৪ ও মেয়েদের জিপিএ-৫ এর হার ৮ দশমিক ২৮। অন্যদিকে মেয়েদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৯ ভাগ এবং ছেলেদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৩ ভাগ। সব বোর্ড মিলে পাস করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৯৭৯ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৩ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪২ জন ও ছাত্রী ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৭ জন। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে সব দিক দিয়েই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। জিপিএ-৫ ও পাসের হারে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ১০টি বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৭। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ০৮। এবার পাসের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৯ ভাগ। তবে ৮টি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫০ ভাগ। এবার ১০টি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ১৬২ জন। যা গত বছরের চেয়ে ২১ হাজার ৩৯৩ জন বেশি। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ হাজার ৪৬৯ জন। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় সব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ১লা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ২৪শে মে। ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ৫৫ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর ৭ হাজার ৪৬৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ২১৯২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৩৬টি। গত বছর ছিল ৮৯২। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৪টি। গত বছরও শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠান ছিল ২৪টি। ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ শিক্ষার্থী পাস করে। ৮টি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫০। গত বছর পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ৩৬। বেড়েছে ৪ দশমিক ১৪ ভাগ। সাধারণ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১৪৬৯ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৩৮৫। জিপিএ-৫ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ হাজার ৮৪ জন। ৮টি বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ১২৩ জন, মানবিকে ৬ হাজার ৪২৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১৪ হাজার ৯২৩ জন। বিদেশী কেন্দ্রে ১৭৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৬৯ জন পাস করে। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪১। মোট ৩২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে বিদেশ কেন্দ্রের। কারিগরি বোর্ডে ৮৬ হাজার ৭০৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৭৩ হাজার ১০৬ জন পাস করে। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩২ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২১১ জন। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ৭৭ ভাগ। এ বোর্ডে ৮৪ হাজার ২৪৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৭ হাজার ৩১৬ জন। মোট ৭ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
কোন বোর্ডে কত জিপিএ-৫: জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ১০৪ জন। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ৬৮৭২ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ২১৫০ জন, যশোর বোর্ডে ৫২২৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৩১৪৫ জন, বরিশাল বোর্ডে ১৮৯৫ জন, সিলেট বোর্ডে ২০৬৫ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৫ হাজার ৯ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৭০৭৩ জন, কারিগরি বোর্ডে ২২১১ জন, ঢাকা ডিআইবিএসে ৪০৯ জন।
কোন বোর্ডে পাসের হার কত: ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৪১ ভাগ। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪৪ ভাগ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৬০ ভাগ, যশোরবোর্ডে ৬৭ দশমিক ৮৭ ভাগ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭২ দশমিক ২৯ ভাগ, বরিশাল বোর্ডে ৬৬ দশমিক ৯৮ ভাগ, সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৭ ভাগ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৪১ ভাগ, মাদরাসা বোর্ডে ৯১ দশমিক ৭৭ ভাগ, কারিগরি বোর্ডে ৮৪ দশমিক ৩২ ভাগ ও ডিআইবিএসে ( ঢাকা) পাসের হার ৮৪ দশমিক ৬৩ ভাগ।
আগামীতে আরও ভাল রেজাল্ট হবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন এসছে। তার ফল আমরা পাচ্ছি। আগামীতে আরও ভাল রেজাল্ট হবে। গতকাল গণভবনে শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে ২০১২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল জানার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা পদ্ধতি বদল করায় শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিবছরই ভাল ফল করছে। তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী। প্রতি বছর পাসের হার বৃদ্ধি পাওয়াই তা প্রমাণ করে। পাঠদানে শিক্ষকদের আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জাতি হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে না পারলে আমরা উন্নতি করতে পারবো না। দারিদ্র্য দূর করতে পারবো না। মাথা উঁচু করে চলতে পারবো না। যারা এ বছর কৃতকার্য হতে পারেনি, তাদের আরও মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভাবনে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারনেটে রাজশাহী সরকারি কলেজ এবং রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ফল প্রকাশ করে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থী সোহেলী জাবিন তৃষ্ণা। তিনি বলেন, আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি- আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী তৃষ্ণার কাছে জানতে চান, প্রথমে কোনটা দরকার ? তৃষ্ণা জবাব দেন, ছাত্রীনিবাস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রীনিবাস হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এরপর রাজশাহী সরকারি কলেজের ছাত্র লাবীবের সঙ্গেও কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের সময় অন্যদের মধ্যে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোহবান গোলাপ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কম্পিউটারের বোতাম টিপে অনলাইনে এএইচএসসি’র ফল প্রকাশ করেন। অন্যদিকে রাজশাহীতে ছিলেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন: গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। মন্ত্রী বলেন, পাসের হার বেড়েছে। জিপিএ-৫ বেড়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ফলাফল ইতিবাচক। নানা ধরনের পদক্ষেপ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চেষ্টার কারণে এমনটি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা পরীক্ষা ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা নিয়ে এসেছি। এখন ৬০ দিনের মধ্যে ফল হচ্ছে- এর কোন ব্যত্যয় ঘটছে না। শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের বলেন, এ বছর ৫৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়েছে।